‘টাকা লাগবে না, কয়টা চাইল আর ওষুধ কিনে দেন’

এভাবে বাজারের ব্যাগ হাতে লাঠিতে ভর দিয়ে বেরিয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চাইছিলেন একলাস। মঙ্গলবার সকালে শহরের খারদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

দুই বছর আগেও ছিলেন সুস্থ-স্বাভাবিক। রংমিস্ত্রীর কাজ করে মোটামুটি ভালো চলছিল একলাস শিকদারের (৪২) সংসার। হঠাৎ একদিন সকালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় শরীরের এক পাশ অচল হয়ে যায় তাঁর। হয়ে পড়েন চলাফেরায় অক্ষম। স্থানীয় ব্যক্তিদের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থও হন।

আবার কাজে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন একলাস। কিন্তু বছর না যেতেই আবারও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ধাক্কা। এবার আর সামলে উঠতে পারেনি একলাসের শরীর। এখন ঠিকমতো চলতে-ফিরতে বা কথা বলতে পারেন না তিনি। অর্থাভাবে বন্ধ চিকিৎসাও।

ঘরে চাল নেই। তাই মঙ্গলবার সকালে বাজারের ব্যাগ হাতে লাঠিতে ভর দিয়ে বেরিয়েছিলেন একলাস। কাউকে দেখলেই খুড়িয়ে চলা একলাস বলছিলেন, ‘আমি খুব অসহায় মানুষ। অসুস্থ হয়ে কাজ করতি পারি না। ঘরে চাইল নেই। টাকা লাগবে না। কয়টা চাইল আর ওষুধ কিনে দেন।’

বাগেরহাট শহরের খারদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অন্যের জমিতে একটি গোলপাতার ঘর তুলে পরিবার নিয়ে থাকেন একলাস। মা–বাবা, দুই মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে একলাসের সংসার চলত নিজের ও তাঁর বাবার আয়ে। এখন নিজে অসুস্থ, বয়সের ভারে কাজ করতে পারেন না তাঁর বাবাও।

একলাস শিকদারের বাবা আবদুর রব শিকদারের বাড়ি ছিল বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামে। তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে একলাস সবার ছোট। একলাসের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন অভাবের কারণে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বাগেরহাট শহরে চলে আসেন আবদুর রব।

একলাস বলেন, ‘ছোট মেয়েডা স্কুলে পড়ে। সকালে এটটা শুকনো রুটি খাইয়ে স্কুলে গেছে। স্কুল ছুটি হলিই বাড়ি আইসে ভাত চাবেনে। ঘরে একমুঠও চাইল নেই। তাই সাহায্যের জননি রাস্তায় বাইর হইছি। ১০০ টাকা পাইছি, এই দিয়ে কয়ডা চাল-ডাল কিনবানি।’

টানা কয়েক দিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে শুধু কচুশাক দিয়ে ভাত খেয়ে কাটিয়েছেন একলাস। তিনি বলেন, ‘মাইয়েডা কয়দিন ধরি এটটু মাছ-গোশত খাতি চায়। কিন্তু আমি কী করে সেই আবদার রাখপো! বলি যে মা, তোর বাবা সুস্থ হলি সব কিনে দেবে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে একলাস বলেন, ‘অসুস্থ হয়ে এই দুই বোছর বহুবার কান্দিছি, আর আল্লাহরে কইছি, খোদা তুমি আমারে সুস্থ করে দেও। আমি যেন আবার কাজ করতে পারি। যখন কাজ করতি পারতাম, তিন বেলা খাইয়ে-পইরে ভালো ছিলাম। অসুস্থ হওয়ার পর ঠিকমতো হাঁটতেই পারি না।’

একলাসের বাবা স্থানীয় মসজিদের খাদেম হিসেবে কিছু টাকা পান। আর তাঁর স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করে মাসে আয় করেন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এই দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে এখন। একলাস বলেন, ‘আমি আজ বড় অসহায়। সুস্থ হতে চাই, কাজ করে খেতে চাই। কিন্তু ডাক্তার দেখাব, টেস্ট করাব, সেই টাকা নেই।’

জানতে চাইলে বাগেরহাট শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব বলেন, ‘একলাসকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী কোটায় ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল (সোমবার) উনি কার্ড হাতে পেয়েছেন। এ ছাড়া ওনার চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদানের আবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে।’