টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন মানুষ

টিকা দিতে এসে তাঁরা দেখেন টিকা দেওয়ার কক্ষে তালা ঝুলছে। পরে হতাশ হয়ে ফিরে যান তাঁরা। ধরমপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সুনামগঞ্জ, ২৯ আগস্ট।
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাভাইরাসের টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। আজ রোববার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে টিকা নিতে আসা শতাধিক নারী-পুরুষ টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান।  তাঁরা তাঁদের টিকার কার্ডে লেখা তারিখ অনুযায়ী, টিকা নিতে এসেছিলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় করোনাভাইরাসে টিকা গ্রহণের জন্য ২২ হাজার ১৬৬ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৯ হাজার ২৪১ জন ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৭ হাজার ৫৭৭ জন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় চলতি বছরের ৪ এপ্রিল থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিনেই নিবন্ধনকারীদের মধ্যে টিকা দেওয়া হয়। যথারীতি আজ সকাল নয়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন দ্বিতল ভবনের দুটি কক্ষে টিকা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু টিকার পরিমাণ কম থাকায় বেলা সাড়ে ১১টা দিকে টিকা দেওয়া কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়। পরে টিকা দেওয়ার দুটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, যে দুটি কক্ষে টিকা দেওয়া হয়, সেই দুটিতে তালা ঝুলছে। টিকাদান কেন্দ্রটি বন্ধ থাকার পরও সেখানে ৮–১০ জন পুরুষকে টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণসহ হাসপাতাল এলাকার বিভিন্ন স্থানে টিকা নিতে আসা মানুষকে আনাগোনা করতে দেখা যায়।

উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের পিঁপড়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন সরকার (৪৮) বলেন, ‘ কার্ডে লেখা তারিখ অনুযায়ী টিকা দিতে বেলা ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাদান কেন্দ্রে এসে দেখি, টিকাদান কেন্দ্রের কক্ষ দুটিতে তালা ঝুলছে। শুধু আমি নই, আমার মতো শতাধিক নারী-পুরুষকে আজ টিকা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে।’


একই ইউনিয়নের মধ্যনগর গ্রামের বাসিন্দা সুবল সরকার (৩৫) বলেন, ‘আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এসে দেখি টিকা দেওয়া শেষ।’

সুবল সরকার বলেন, ‘এত দূর থাইক্যা আইয়া টিকা না লইতে ফাইরা মনটা খুউব খারাপ অইয়া গেছে। হাসপাতালের একজন ডাক্তাররে জিগাইছিলাম। কুন দিন আমরা টিকা দিতাম হারাম, কুন দিন দেওন যাইব, এইডা হেইন কইতাইন হারছইন না।’

ধরমপাশা সদর ইউনিয়নের লংকাপাতারিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘ম্যালাক্ষণ অপেক্ষা কইরা টিকা না দিয়ে অহন বাড়িত চইল্যা যাইতাছি। টিকা নাই, তয় নিবন্ধন কইরা লাভ কী অইল?’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল শনিবার সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মহোদয়ের কার্যালয়ে থেকে আমরা মাত্র ৫০০ ডোজ টিকা পেয়েছি। এই টিকা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শেষ হয়ে যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকার মজুত নেই। আবার কবে থেকে শুরু হবে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মো. শামস উদ্দিন রোববার বেলা আড়াইটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপাতত করেনাভাইরাসে টিকা মজুত নেই। কবে পাব, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমাদের এখানে সরবরাহ হওয়ামাত্রই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে।’