ঠাকুরগাঁওয়ে আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়া কমানোর দাবি চাষিদের

ঠাকুরগাঁওয়ে আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়া কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়া কমানোর দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে সমাবেশ করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

এ সময় বক্তারা বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে হিমাগারমালিকেরা চলতি মৌসুমে ৫০ কেজির আলুর বস্তা সংরক্ষণের জন্য ২৬০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। অথচ গত মৌসুমে ৭০ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়া ছিল ২৫০ টাকা। এ ছাড়া এ বছর মানিকগঞ্জে প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে ১৭৫ টাকা এবং মুন্সিগঞ্জে ২১০ থেকে ২২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে হিমাগারের বাড়তি ভাড়া মেটাতে গেলে তাঁদের খরচ বেড়ে যাবে। এতে আলুর বাজারদরও যাবে বেড়ে।

সমাবেশে জেলা আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি রমজান আলী, সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হক, কৃষক মোহাম্মদ হেলাল, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. খালিকুজ্জামান, সুজন মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর (এক হেক্টর সমান ২.৪৭ একর) জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এ থেকে পাওয়া গেছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৮ মেট্রিক টন আলু। আলু সংরক্ষণের জন্য জেলায় ১৫টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। স্থান সংকটের কারণে হিমাগারমালিকেরা প্রতিবছর আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাড়িয়ে দেন।

আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের জন্য ৫ টাকা ২০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। সে হিসাবে ৫০ কেজি আলুর বস্তাপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২৬০ টাকা।

হিমাগার ভাড়া কমানোর দাবিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা। পরে তাঁরা জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমানকে স্মারকলিপি দেন। জেলা প্রশাসক সে সময় হিমাগার থেকে আলু বের করার সময় হলে ভাড়া কমানোর পক্ষে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম কম থাকে। এ সময়ে তাঁরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেন। পরে চাহিদা বুঝে সেসব আলু বের করেন। সংরক্ষণের বাইরে থাকা আলু ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন হিমাগার সংরক্ষণে রাখা আলু বের করতে শুরু করেছেন তাঁরা। এ অবস্থায় হিমাগারমালিকেরা বাড়তি হারে ভাড়া আদায় করায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হক বলেন, আলু চাষে উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও বাজারদর এখনো অনেক কম। হিমাগার ভাড়া বাড়ানোয় চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই এ বছরও গত বছরের ভাড়াটাই নির্ধারণ করার দাবি জানান তিনি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ঠাকুরগাঁওয়ের সভাপতি মো. আবদুল্লাহ বলেন, বিদ্যুতের দাম ও শ্রমিকের মজুরির খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৫ দশমিক ২০ টাকা নির্ধারণ করেছে অ্যাসোসিয়েশন। গত মৌসুমে ওই ভাড়া পাঁচ টাকা ছিল।

আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো.মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দ্রুত দুই পক্ষের সঙ্গে বসে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণে উদ্যোগ নেব।’