ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙন

গত ২০ দিনে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িসহ ফসলি জমি, মাছঘাট ও বাজার ভেঙে গেছে।

ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নের জোড়খাল এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ভোলা সদর উপজেলায় মেঘনা-ইলিশা নদীর মোহনায় রাজাপুর ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২০ দিনে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িসহ ফসলি জমি, মাছঘাট ও বাজার ভেঙে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি বস্তা ফেললেও ভাঙন রোধ হচ্ছে না।

রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ রানা বলেন, যে হারে ভাঙন হচ্ছে, তাতে মনে হয় না রাজাপুর আর টিকবে। দ্রুত রাজাপুরের জোড়খাল থেকে চরমোহাম্মদ পর্যন্ত পাকা ব্লক ফেলে তীর সংরক্ষণ করা দরকার।

ভাঙনকবলিত উত্তর রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ব্যবসায়ী মিলন পালওয়ান (৫৫)। ভাঙনের কবলে পড়ে তাঁকে বাড়িঘর ছাড়তে হচ্ছে। ১৩ বার দোকানঘর সরিয়েছেন। পরপর দুই বছর ভাঙন-জলোচ্ছ্বাসে দোকান ভেসে গিয়ে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরে তিনি দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের জোড়খাল মাছঘাটে চলে আসেন। এখানেও দুবার দোকান সরাতে হয়েছে। গত মাসের শেষ দিকেও একবার দোকান সরিয়েছেন। মিলন পালওয়ান বলেন, বছরে যা আয় করেন, তার একটা অংশ চলে যায় ভাঙনের কারণে দোকান সরাতে। তবুও এভাবেই চলতে হচ্ছে।

জোড়খালের বাসিন্দা বজলুর রহমান চৌকিদারের বিলে ২ একর ৪০ শতাংশ ফসলি জমি ছিল। বসতবাড়িতে ছিল ৬৩ শতাংশ জমি। এক বছর আগেও এসব জমির অস্তিত্ব ছিল দক্ষিণ রাজাপুর মৌজায়। এখন সেখানে নদীর উত্তাল ঢেউ আর সারি সারি নৌকা দেখা যায়।

ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দক্ষিণ রাজাপুরের পল্লি চিকিৎসক আমির হোসেনের বসতভিটা। তিনি বলেন, ভাঙনে দক্ষিণ রাজাপুরের মানুষের জীবন অচল হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা বিলীন হওয়ার কারণে এখন সাঁকো বসেছে। অনেকগুলো পুকুরের পাড় ভেঙে নদী ঢুকে পড়েছে। মাছঘাট ভেসে গেছে। উঁচু জমির গাছগাছালি ভেঙে মাটি ধুয়ে যাচ্ছে।

আমির আরও বলেন, তাঁদের দাবি ছিল শীতে কিছু বস্তা (বালুভর্তি জিও বস্তা) ফেলে ভাঙনের মুখটি আটকে দিক। পাউবো সেটি করেনি।

পাউবোর ভোলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার উত্তরে মেঘনা-ইলিশা নদীর মোহনা ভয়ংকর হয়ে উঠছে। উত্তরের ঢলের পানি সরাসরি এ অঞ্চলে নদীর তীরে আঘাত করছে। এ অঞ্চলের ৩ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণে ‘ইলিশা-রাজাপুর রক্ষা প্রকল্প’ নামে ৩৪০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্পের সীমা জোড়খালের আগপর্যন্ত (পূর্বপাশ), যেখানে এসে ইলিশা নদী পূর্ব দিকে মোড় নিয়েছে।

এ ছাড়া রাজাপুর, ইলিশা-কাচিয়া, ধনিয়া-শিবপুর রক্ষা প্রকল্প নামে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ফাইল চালাচালি হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হলে ভোলা শহরসহ সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন হুমকির মুখে পড়বে।

পাউবো-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ভাঙনের তীব্রতা কম থাকতেই বস্তা-টিউব ফেলে ভাঙনরোধে তাঁরা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। গত আগস্টে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। পরে ২০০ মিটার তীর সংরক্ষণে জরুরি ভিত্তিতে বস্তা-টিউব ফেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্রোত ও ঢেউয়ের তীব্রতা বেশি। নদীর গভীরতা বেড়ে প্রায় ৩৭ থেকে ৪০ মিটার হয়েছে। এ প্রতিরোধ কতটুকু কার্যকর হবে, তা বলা যাচ্ছে না।