ডাঙায় নিষিদ্ধ ‘বোমা মেশিন’ জলে চলছে অবাধে
নৌযানটি স্টিলের তৈরি। এতে লাগানো হয়েছে একটি যন্ত্র, যা ‘বোমা মেশিন’ হিসেবে পরিচিত। এই যন্ত্রের সঙ্গে লাগানো কয়েকটি পাইপ দিয়ে ধলাই নদের তলদেশ থেকে অবৈধ তোলা হয় বালু। সেই বালু বিক্রি করা হয়। সিলেটের পাথর কোয়ারিতে নিষিদ্ধ ডাঙার এসব ‘বোমা মেশিন’ এবার কোম্পানীগঞ্জে ধলাই নদে নৌযানে স্থাপন করে বালু তোলার কাজে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আজ বুধবার সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত টাস্কফোর্স ধলাই নদের ঢালারপার ও ইসলামগঞ্জ বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ যন্ত্রের নয়জন মালিককে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করেছে। কোম্পানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুসা নাসের চৌধুরীর নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের এই অভিযান হয়। অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অংশ নেন।
টাস্কফোর্স সূত্র জানায়, ধলাই নদের যে স্থান থেকে ‘বোমা মেশিন’ দিয়ে বালু তোলা হচ্ছিল, তা বালুমহালের সীমানার বাইরে। ওই যন্ত্র দিয়ে তলদেশ থেকে বালু তোলায় নদের তীরবর্তী এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে টাস্কফোর্স ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে বোমা মেশিন যুক্ত আছে, এমন নয়টি নৌযান জব্দ করে। এরপর নৌযানের মালিকদের শনাক্ত করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুসা নাসের চৌধুরী তাঁদের জরিমানা করেন।
টাস্কফোর্স যে নয়জনকে জরিমানা করেছে, তাঁরা হলেন কোম্পানীগঞ্জের কামাল মিয়া, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের মাসুক মিয়া, আজির উদ্দিন, হায়াতুল ইসলাম, সাজুল ইসলাম, তাহিরপুরের বোরহান উদ্দিন, ছাতকের শামছু মিয়া, ধরমপাশার প্রাণনাথ ও জামালগঞ্জের হেলাল আহমদ।
প্রশাসন সূত্র জানায়, ‘বোমা মেশিন’ পাথর কোয়ারিতে ডাঙায় ব্যবহৃত একটি অবৈধ যন্ত্র। পানি উত্তোলনযন্ত্রকে (পাওয়ার পাম্প) রূপান্তর করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘বোমা মেশিন’। মাটির প্রায় ৩০০ ফুট গভীর থেকে পাইপ দিয়ে পানি তোলার ভান করে উত্তোলন করা হয় পাথর। এই যন্ত্র চালানোয় ভূগর্ভস্থ মাটির স্তর পরিবর্তন হওয়ায় ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত এই যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সিলেটের পাথর কোয়ারিতে পরিবেশ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে।
শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে বোমা মেশিনের নানা নাম দিয়ে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বর্ষকালে ড্রাম দিয়ে ভাসমান অবস্থায় বোমা মেশিন চালাতে দেখা গেছে। নৌযানের মধ্যে ‘বোমা মেশিন’ স্থাপন করে ধলাই নদ থেকে বালু উত্তোলন এবারই প্রথম দেখা গেছে। ধলাই নদে প্রতিদিন এ রকম শতাধিক নৌযান দিয়ে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে।
জলে অথবা ডাঙায়—কোথাও অবৈধ এই বোমা মেশিন ব্যবহারের অনুমতি নেই বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বালু বা পাথর তোলার কাজে ‘বোমা মেশিনের’ ব্যবহার উচ্চ আদালত থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাথর কোয়ারির মতো টাস্কফোর্সের অভিযান নিয়মিত করে অবৈধ এই যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।