ঢাকায় রিং রোড সম্প্রসারণ না হলে ভোগান্তি বাড়বে

পদ্মা সেতু
ফাইল ছবি

পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীতে যানবাহনের চাপ বাড়বে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যানবাহন চলাচল বাড়বে, যার একটি বড় অংশ যাবে রাজধানী হয়ে। সমস্যা হলো, ঢাকার যানজট সামাল দিতে কয়েকটি প্রকল্প পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা তেমন একটা এগোয়নি।

সংশোধিত কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকায় যানজট নিরসনে শহরের চারদিকে ইনার রিং রোড ও আউটার রিং রোড নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এ দুই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকায় না ঢুকেই যানবাহন পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে যাতায়াত করতে পারবে। স্বল্প মেয়াদে রাজধানীর গাবতলী থেকে কেরানীগঞ্জের কদমতলী দিয়ে একটি সড়ক তৈরি করার কথা। সেটিরও কাজ খুব একটা এগোয়নি।  

এদিকে পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে দেড় বছরের মধ্যে। গত বৃহস্পতিবার সেতুটির শেষ স্প্যান বসানো হয়। এর মাধ্যমে সেতুর কাঠামো রূপ পায়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার আশা করছে সরকার।

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল) সবুজ উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমাতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। যানবাহনের চাপ কমাতে সওজ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জানায়, ঢাকার যানজট কমাতে আউটার ও ইনার সার্কুলার রিং রোড নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে মোট প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে সরকারের।

গাবতলী থেকে কদমতলী

ঢাকা থেকে এখন গাবতলী বাস টার্মিনাল ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল দিয়ে বাস চলাচল করে। ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকেও কিছু কিছু বাস চলে। পদ্মা সেতু চালু হলে বড় চিন্তা গাবতলীর বাসগুলো কীভাবে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে।

সওজ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাবতলী থেকে শুরু করে মোহাম্মদপুর হয়ে বছিলা সেতু দিয়ে কেরানীগঞ্জ-কদমতলী হয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক পর্যন্ত রাস্তাটি চওড়া করার কাজ এগিয়ে চলছে। এখন সেখানে যে রাস্তা রয়েছে, তা ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট চওড়া করা হচ্ছে।

সড়কের গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত অংশে কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তবে মোহাম্মদপুর থেকে বছিলা পর্যন্ত সড়কটি চওড়া করার কাজ চলছে। সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই সড়ক চওড়া করার কাজ শেষ হবে। এতে করে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ ওই সব এলাকার মানুষ সহজে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে পারবে।

ইনার সার্কুলার রোড

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকায় প্রস্তাবিত ইনার সার্কুলার রোডের দৈর্ঘ্য ৮৮ কিলোমিটার। বর্তমানে এর ৬৩ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। যদিও খুবই সরু। আর বাকি ২৫ কিলোমিটার রাস্তা একেবারে নতুন করে তৈরি করতে হবে। নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রুট নির্ধারণের কাজ করছে। পাউবো জমি অধিগ্রহণ, স্নুইসগেট নির্মাণের পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণ করে দেবে। আর ১০ লেনের রাস্তাটি করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাথমিক প্রাক্কলন করা হয়েছে।

আউটার সার্কুলার রোড

৫ থেকে ১০ বছরের মেয়াদের পরিকল্পনা হলো ঢাকা আউটার রিং রোড। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে কালাকান্দি-তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, মদনপুর, ভুলতা হয়ে গাজীপুরের কড্ডা থেকে ঢাকা-ইপিজেড বাইপাইল দিয়ে হেমায়েতপুর পর্যন্ত। এই সড়কের দৈর্ঘ্য মোট ১৩০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার রাস্তা নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। বাকি ৮৪ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ককে উপযোগী করে তুলতে হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে মুন্সিগঞ্জ ও মাওয়া হয়ে যাত্রাবাড়ী দিয়ে অসংখ্য যানবাহন ঢাকায় ঢুকবে। এমন বাস্তবতায় আউটার রিং রোডের আওতায় ৪৮ কিলোমিটার রুট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই রুটের সমীক্ষার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সওজের কর্মকর্তারা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) এই প্রকল্পে অর্থায়নের কথা রয়েছে।

এর বাইরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের হাঁসাড়া পর্যন্ত জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণে ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প নেওয়া হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম শামসুল হক গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকায় প্রবেশপথে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রথম কয়েক বছর ঢাকায় প্রবেশের পথে যানজটের আশঙ্কা প্রবল। যাত্রীদের শুধু যাত্রাবাড়ী কিংবা বছিলা দিয়ে নয়, সমভাগে বিস্তৃত করে ঢাকা থেকে বের করার সুযোগ করে দিতে হবে। সে জন্য দরকার হলো রিং রোড। যাত্রীরা ঢাকায় না ঢুকেই রিং রোডের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে চলে যাবে। শামসুল হক বলেন, কোনো কারণে যদি একটা দুর্ঘটনা ঘটে, তখন মাওয়ার সড়কে যুক্ত হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রিং রোড করতে হবে। অবশ্য রিং রোডের জন্য সমীক্ষার কাজ চলছে।