তদন্ত কমিটির সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

গত ২৬ এপ্রিল লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকমপাড়া, জয়চন্দ্রপাড়া ও রেংয়েনপাড়ার জুমচাষের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, ফলদ-বনজ বাগান ও ধানের জমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়
ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের লামা সরইয়ে জুমচাষের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি আজ রোববারের শুনানির সময় সমঝোতার প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করেন ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরা বাসিন্দারা। সমঝোতার প্রস্তাব শুনে বিক্ষুব্ধ পাড়াবাসী শুনানি থেকে বের হয়ে যান।

ক্ষতিগ্রস্ত পাড়াবাসী বলেছেন, তাঁরা জুমচাষের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধের বিচার ও ক্ষতিপূরণ চান। দখলদার লামা রবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা করে কোনো জায়গাজমি নেবেন না।

রেংয়েনপাড়ার কার্বারি রেংয়েন ম্রো ও লাংকমপাড়াবাসী য়ংইন ম্রো জানিয়েছেন, পাড়াবাসীর বক্তব্য শোনার একপর্যায়ে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ একর করে জমি দেওয়া হবে মর্মে সমঝোতার প্রস্তাব করা হয়। কমিটির এ প্রস্তাবে পাড়াবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে শুনানি সভা থেকে বের হয়ে যান। এ সময় তাঁরা বলেন, এ রকম প্রস্তাব লামা উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় লামা রবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড আগেও দিয়েছিল। দখলদার লামা রবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড থেকে সমঝোতা করে তাঁরা কোনো জায়গাজমি নিতে চাননি। জুমচাষের ৪০০ একর জায়গা পাড়াবাসীর, লামা রবার ইন্ডাস্ট্রির নয়। নিজেদের জুমচাষের জমি দখলদারের সঙ্গে সমঝোতা করে দখলদার থেকে নেওয়ার প্রস্তাব অযৌক্তিক।

গণশুনানি শুরুর আগে তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকাল ১০টায় প্রথমে ঘটনাস্থল লাংকমপাড়া ও জয়চন্দ্রপাড়া এলাকা পরিদর্শনে যান। তাঁরা পুড়িয়ে দেওয়া বনাঞ্চলও ঘুরে দেখেন। সেখান থেকে ফিরে সরই ইউনিয়ন পরিষদের মিলনায়তনে তদন্ত কমিটি শুনানি শুরু করেন। তিনটি পাড়ার ম্রো ও ত্রিপুরা বাসিন্দা এবং লামা রবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের লোকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে আসা লাংকমপাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) লাংকম ম্রো বলেছেন, তদন্ত কমিটি প্রথমে পাড়াবাসীর বক্তব্য শুনতে চেয়েছে। এ সময় তাঁরা বলেছেন, লামা রবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড গায়ের জোরে পাড়াবাসীর জুমচাষের ৩৫০ একর বনাঞ্চল দখল করে এবং বনাঞ্চল কেটে পুড়িয়ে দিয়েছে। আগুনে বনাঞ্চলের লাখ লাখ টাকার বাঁশ-গাছ ধ্বংস হয়েছে। একই সঙ্গে পাড়াবাসীর ফলদ-বনজ বাগান, ধানের খেত, শ্মশানভূমি পুড়ে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে লামা রবার ইন্ডাস্ট্রি থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ছাড়া লামা রবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড পাড়াবাসী হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সেসব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

গত ২৬ এপ্রিল লামা উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সরই ইউনিয়নের লাংকমপাড়া, জয়চন্দ্রপাড়া ও রেংয়েনপাড়ার জুমচাষের বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পাড়াবাসীর অভিযোগ, লামা রবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড তাঁদের বনাঞ্চল পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার পর লামা রবার ইন্ডাস্ট্রির আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হলে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনটি পাড়ার জুমচাষের বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সারা দেশে আলোচিত হয়ে ওঠে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পাড়াবাসীদের উচ্ছেদের জন্য বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে বিবৃতি দেয়। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর প্রতিনিধি বাথেয়াইচিং মারমা জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষের মতামত জানতে চেয়েছে। সমঝোতা প্রস্তাব ম্রো ও ত্রিপুরারা মানেননি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কমিটি আরও উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবে।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক লুৎফর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। তবে পাড়াবাসী প্রস্তাব মানেননি। তবে তদন্ত ও শুনানি আগের মতো চলবে।