তিন বছর ধরে ভিক্ষুকদের খাওয়াচ্ছেন তাঁরা

ভিক্ষুকদের জন্য প্রতি বুধবার দুপুরে খাবারের আয়োজন করে উপজেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সপ্তাহে এক দিন ভিক্ষুকদের খাওয়ানো হয়। গত বুধবার শহরের হাইস্কুল সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সদরের বাজারে প্রতি সপ্তাহের বুধবার হাট বসে। হাট উপলক্ষে ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা বাড়ায় এদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিক্ষুকেরা এখানে আসেন। অতিদরিদ্র এই মানুষদের জন্য প্রতি বুধবার দুপুরে খাবারের আয়োজন করে মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর এই কাজ তারা করছে তিন বছর ধরে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাটের দিন গ্রাম থেকে ভিক্ষুকেরা আসেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাঁদের অনেকেই দুপুরে না খেয়ে সারা দিন ভিক্ষা শেষে বাড়ি ফেরেন। এ জন্য তাঁরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ভিক্ষুকদের দুপুরে একবেলা খাবার খাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাঁরা গড়ে তোলেন মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশন।

সুলতান আহমেদ বলেন, ‘প্রথমে ভিক্ষুকদের ডেকে এনে খাওয়াতাম। আমাদের আয়োজনের কথা ভিক্ষুকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এখন প্রতি হাটের দিন ১৩০ থেকে ১৫০ জন ভিক্ষুকের খাবারের ব্যবস্থা করছি। তাঁদের পোলাও, মুরগির রোস্ট অথবা খিচুড়ি-মাংস খাওয়াচ্ছি। বিভিন্ন ব্যক্তির দেওয়া অনুদান ও সংগঠনের সদস্যদের চাঁদা দিয়ে খাবারের আয়োজন করা হয়। আরিফুর রহমান নামের একজন চাল ব্যবসায়ী চাল দিয়ে আমাদের সহায়তা করেন। শহীদ মীর মান্নান নামের একজন প্রতি সপ্তাহে এক হাজার করে টাকা দিচ্ছেন।’

গত বুধবার শহরের হাইস্কুল সড়কের উপজেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেলা দেড়টার পর সেখানে ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধীরা আসা শুরু করেছেন। দুইটার দিকে খাবার বিতরণ শুরু হয়। দেড় শ প্যাকেট পোলাও ও মুরগির রোস্ট বিতরণ করা হয় সেদিন।

খাবার নিতে আসা উপজেলার উত্তর ছোট শৌলা গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. মোস্তফা (২৫) বলেন, ‘সাত বছর ধরে প্রতি বুধবার ভিক্ষা করতে মঠবাড়িয়া বাজারে আসি। দুপুরে খেতে ৫০-৬০ টাকা খরচ হয়। এ জন্য প্রায়ই না খেয়ে সারা দিন ভিক্ষা করে বাড়ি গিয়ে রাতে খেতাম। তিন বছর ধরে দুপুরে এখানে খাই।’

স্থানীয় সাংবাদিক জুলফিকার আমিন বলেন, সেখানে এসে দরিদ্র, ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী মানুষেরা সপ্তাহে অন্তত একবেলা ভালো খেতে পারেন। এখানে আসা ভিক্ষুকদের বেশির ভাগ শারীরিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং কর্মহীন বৃদ্ধ।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিরাজ আহমেদ বলেন, সংগঠনটির কার্যক্রম দেখার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। উদ্যোগটি প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।