ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুম ভেঙে যায় মো. ইমরান আহমদের (২৮)। বাইরে বেরিয়ে হঠাৎই ‘গুম গুম’ শব্দ শুনতে পান। সঙ্গে গোঙানির শব্দও ভেসে আসে। দ্রুত ঘরে থাকা বড় ভাই মাসুক আহমদকে ডাক দিয়ে দৌড়ে চলে যান প্রতিবেশী রফিক আহমদের বাড়িতে।
সেখানে গিয়ে দেখতে পান ঘরের ওপর টিলা ধসে পড়েছে। মাটিচাপায় আধা পাকা টিনের ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এরপর তিনি হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে নেমে পড়েন। এ সময় অপর তিন ভাইকে নিয়ে একে একে সাতজনকে জীবিত উদ্ধার করেন ইমরান।
আজ সোমবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের সাতজনি গ্রামে এই টিলাধসের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন জুবের আহমদ (৩৫), তাঁর ছেলে সফি আহমদ (৫), স্ত্রী সুমি আক্তার (২৮) ও জুবেরের বড় ভাই রফিক আহমদের স্ত্রী শামীমারা বেগম (৩৮)।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইমরান আহমদ বলেন, ‘তখন ভোর পৌনে পাঁচটা বাজে। ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে মুঠোফোন টিপছিলাম। হঠাৎ মাটি ধসে পড়ার শব্দ পাই। সঙ্গে ঘর ভেঙে পড়ারও। গোঙানির শব্দও আসছিল। প্রথমে মনে করেছিলাম টিলা ধসে আমাদের ঘরের ওপর পড়েছে। তবে কিছুক্ষণ পর টের পাই, প্রতিবেশী জুবের আহমদের বাড়িতে ধসে পড়েছে টিলা। এ সময় বড় ভাই মাসুক আহমদকে ডাক দিয়েই ওই বাড়ির দিকে দৌড় দিই। ঘরে ঢুকে প্রথমে জুবের আহমদের বৃদ্ধ বাবা আবদুল করিম ও মা খইরুন নেছাকে উদ্ধার করি। এরপর বড় ভাই মাসুক আহমদ এবং ছোট দুই ভাই কামরান আহমদ ও সুরমান আহমদ যোগ দেয় উদ্ধারকাজে।’
তিন ভাই মিলে একে একে জুবের আহমদের ভাই রফিক আহমদ এবং তাঁর ছেলে রাফি আহমদসহ সাতজনকে উদ্ধার করেন। পরে আশপাশের মানুষ উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন জানিয়ে ইমরান আহমদ বলেন, রফিক আহমদ ঘরের নিচে চাপা পড়া অবস্থায় স্ত্রী শামীমারা বেগমকে খুঁজছিলেন। এ সময় রফিক বলছিলেন, শামীমারা রান্নাঘরের দিকে রয়েছেন। সেখানে খুঁজে দেখার জন্য।
ইমরান আরও বলেন, ‘রান্নাঘরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখি, সেখানে মাটি ও ঘরের ভাঙা অংশ চাপা পড়েছে। ভেতরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া পাচ্ছিলাম না। এদিকে রফিক আহমদ আহত হওয়া শরীরে শক্তি পাচ্ছিলেন না। তাই তাঁকে উদ্ধার করে আমাদের ঘরে নিয়ে যাই। পরে শামীমারা বেগমসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।’