তিন ভাইবোন এক দশক ধরে শিকলবন্দী

উপজেলার বজ্রপুর গ্রামের তিন ভাইবোনকে দিনরাত শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন স্বজনেরা। অর্থসংকটে চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবার।

পায়ের শিকলটি বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা। দিনের শুরুতে বাড়ির লোকজন উঠানে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। সময় হলে খাবার দিয়ে যান। রাত হলে শিকল খুলে ঘরে নেওয়া হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীত—১০ বছর ধরে এভাবেই শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন নওগাঁর আত্রাইয়ের বজ্রপুর গ্রামের তিন ভাইবোন।

পরিবারের সদস্যদের মতে, মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ওই তিন ভাইবোনকে এভাবে শিকলে আটকে রাখা হয়েছে। শিকল খুলে দিলে পালিয়ে যান, অন্যদের সঙ্গে ঝগড়া করেন। শুরুর দিকে চিকিৎসা করালেও অর্থসংকটে তা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বজ্রপুর গ্রামের ওই তিন ভাইবোন হলেন নার্গিস বেগম (৩৫), সাইফুল ইসলাম (৩০) ও রোজিনা বেগম (২৭)। তাঁরা গ্রামের লবা প্রামাণিকের সন্তান।

উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের বজ্রপুর বাজারসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে লবা প্রামাণিকের বাড়ি। মাটির বাড়ির বিভিন্ন অংশে ভেঙে গেছে। কথা বলে জানা যায়, লবা প্রামাণিকের পাঁচ ছেলেমেয়ে। বাকি দুই ছেলেমেয়ে বিয়ে করে অন্য এলাকায় থাকেন।

একসময় তিন ছেলেমেয়ের প্রত্যেকের আচরণ স্বাভাবিক ছিল। ধীরে ধীরে তাঁদের মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
রাইজান বেগম, তিন ভাইবোনের মা

বাড়িটির উঠানে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা দেখা যায় নার্গিস বেগমকে। একটি ঘরের পাশের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা সাইফুল ইসলাম ও রোজিনা বেগম। তাঁদের প্রতিবেশী সাজ্জাদ আলী বলেন, তিনজনেরই বিয়ে হয়েছিল। নার্গিসের সন্তান দাদার আর সাইফুলের সন্তান নানির বাড়িতে থাকে।

নার্গিসের মা রাইজান বেগম বলেন, একসময় তাঁর এই তিন ছেলেমেয়ের প্রত্যেকের আচরণ স্বাভাবিক ছিল। ধীরে ধীরে তাঁদের মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। তাঁদের নানা আচরণে গ্রামের মানুষের অতিষ্ঠ। খাবার দিলে খান না, পাত্র ভেঙে ফেলে। কাউকে পেলে মারধর করতে যান। তাই বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন।

লবা প্রামাণিক বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ার পর ছেলেমেয়েদের পাবনার মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসাসহ আনুষঙ্গিক খরচ দিতে না পেরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এখন নিজের তেমন আয়–উপার্জন নেই। সাহায্যের জন্য সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

আহসানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আহসান হাবিব কায়েস বলেন, ওই পরিবারের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেশীরাও যখন যা পারেন তা দিয়ে সহযোগিতা করেন। পরিবারটির জন্য স্থায়ী ভাতার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে।