তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখন এতিমের মতো ঘুরছেন

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপিতে দীর্ঘদিন কমিটি নেই। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে গঠিত আহ্বায়ক কমিটি দীর্ঘদিনেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। সাত বছর পর সেই কমিটি ভেঙে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মাহমুদ হাসান খানকে আহ্বায়ক ও শরিফুজ্জামান শরিফকে সদস্যসচিব করে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। দলের ভেতরে সংকট, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসানের সঙ্গে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সাত বছর পর পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি পেলেন। এখন মূল কাজ কী হবে?

মাহমুদ হাসান খান: মূল কাজ হলো সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করা। সে লক্ষ্যে তৃণমূলে গিয়ে কমিটি করা। সাত বছর আগে জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় ইউনিটগুলোও ভেঙে দেওয়া হয়। দলের শক্তি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখন এতিমের মতো ঘুরছেন। আমরা যথাসম্ভব তৃণমূলের কমিটিগুলো করে ফেলব।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়ে কী ভাবছেন?

মাহমুদ হাসান খান: সহযোগী সংগঠনগুলোর কাজ তো চলছে। ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও কার্যক্রম চলমান আছে। এখন একটাই লক্ষ্য, মূল দল দ্রুত সময়ে গোছানো। কারণ, মূল দলের কাঠামো না থাকলে সহযোগী সংগঠন ঠিকমতো পরিচালনা করা যায় না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সাত বছরেও জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি কেন?

মাহমুদ হাসান খান: দলে গ্রুপিং ছিল। মোজাম্মেল হক-শামসুজ্জামান দুদু এবং অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস-আব্দুল জব্বার সোনার নেতৃত্বে জেলা বিএনপির দুটি কমিটি ছিল। কোন কমিটি সঠিক, কোনটা কেন্দ্র অনুমোদিত, তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। তারপর অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি আহ্বায়ক কমিটি হলো। ওইখানেও কিছু অভিযোগ ছিল বলে সম্মেলন হয়নি, কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে মান-অভিমানের কারণে অহিদুল ইসলাম দলে নেই। দলের ভেতরে গ্রুপিংয়ের কারণেই কমিটিগুলো হয়নি। এ ছাড়া হয়রানিমূলক মামলাও একটি কারণ।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মামলার সংখ্যা কত?

মাহমুদ হাসান খান: আমার কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে জেলার সব কটি ইউনিট মিলে মামলার সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি হবে। ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এসব মামলা পরিচালনা করছি। বিচারব্যবস্থার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে আমাদের নেতা-কর্মীদের সময়ের একটা বড় অংশ আদালত চত্বরে দিতে হয়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দল গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। যারা অভিমানে নিষ্ক্রিয় বা দল থেকে বহিষ্কৃত, তাদের বিষয়ে ভাবনা কী?

মাহমুদ হাসান খান: একজনও কর্মীকেও হারাতে চাই না। বহিষ্কার করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। প্রত্যাহারের বিষয়টিও কেন্দ্রের। মান-অভিমানের বিষয়টি সাময়িক। জেলা কমিটির প্রথম সভায় ৩১ সদস্যের ২৯ জনই উপস্থিত ছিলেন। শাওন তরফদার চিকিৎসাজনিত কারণে বিদেশে ছিলেন আর ওয়াহেদুজ্জামান আগামী সভায় থাকবেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ওয়াহেদুজ্জামানের (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর ভাই) অনুপস্থিতি কি অভিমান?

মাহমুদ হাসান খান: রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। ওনার অনুসারী অনেকেই কমিটিতে আসতে পারেননি। প্রথম মিটিংয়ে গেলে অনুসারীরা তাঁর ওপর মান-অভিমান করতে পারেন। বিষয়টি সহজ করার জন্য উনি চেষ্টা করছেন। ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি হলে যোগ্যতার বিবেচনায় অনেকেই কমিটিতে আসবেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কমিটি গঠনপদ্ধতি কী হবে?

মাহমুদ হাসান খান: দলের যাঁরা ১০ টাকা দিয়ে প্রাথমিক সদস্য পদ নিয়েছেন, তাঁরাই কমিটি গঠনে মতামত দিতে পারবেন। ওয়ার্ড থেকে পাঁচজন করে নেতা নির্বাচন করা হবে। কোনো জায়গাই যদি সমঝোতা না হয়, তাহলে ভোট হবে। বিতর্কমুক্ত কমিটি গঠন করতে চাই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ১০ টাকা দিয়ে কতজন সদস্য হয়েছেন?

মাহমুদ হাসান খান: ৩২ হাজার ৩০০ জন প্রায়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দল গোছাতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে?

মাহমুদ হাসান খান: প্রশাসন ও সরকারি দল থেকে আগেও চাপ ছিল, এখনো আছে। সেটা মোকাবিলা করেই আমরা সামনে আগানোর চেষ্টা করব।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দল গোছানোর পাশাপাশি আর কোনো লক্ষ্য আছে?

মাহমুদ হাসান খান: গঠনতন্ত্র মেনে দল গোছানোর কাজ প্রথমে করতে চাই। এরপরের লক্ষ্য, আন্দোলন-সংগ্রাম। মূল আন্দোলন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি। দেশে যদি গণতন্ত্র ফিরে না আসে, যারা সক্রিয় দল করি তাঁরা সাফার করছেন, করবেন।