দখলে-দূষণে বিলীনের পথে কালন্দি খাল

খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার। সবচেয়ে বেশি দখল-দূষণ হয়েছে উপজেলার পরিষদের সামনে থেকে সড়কবাজার পর্যন্ত অংশে।

শত বছরের পুরোনো কালন্দি খাল দখলে ও দূষণে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি আখাউড়া পৌর শহরের সড়কবাজার এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া শত বছরের পুরোনো কালন্দি খাল দখল ও দূষণে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে খালের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এই খাল দিয়ে বৃষ্টি ও ঢলের পানি নিষ্কাশন করা হয়। কিন্তু দখল–দূষণে পানি নিষ্কাশনের এই পথ বন্ধ হয়ে পড়ায় ভারতের পাহাড়ি ঢলে পৌর এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা আছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, খালের দখল হওয়া অংশ উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ প্রসঙ্গে আখাউড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসক উপজেলার মানচিত্র অনুযায়ী খালের উৎপত্তিস্থল, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বের করে দখল ও দূষণমুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, আখাউড়া-আগরতলার সীমান্তের আখাউড়া চেকপোস্ট থেকে কালন্দি খালের উৎপত্তি। খালটি উপজেলার স্থলবন্দর, গাজীরবাজার, নারায়ণপুর বাইপাস মোড়, পৌর এলাকার সড়ক বাজার ও বড় বাজার দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিতাস নদীতে মিলিত হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়।

চেকপোস্ট থেকে তিতাস নদীর মিলিত স্থান পর্যন্ত খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার। এর মধ্যে উপজেলার পরিষদের সামনের এলাকা থেকে সড়কবাজার পর্যন্ত অংশে সবচেয়ে বেশি দখল ও দূষণ হয়েছে। খালের দুই পাড়ের ওপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর গড়ে উঠেছে। সড়কবাজার এলাকায় খালের অংশে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনায় ভরে খালটি সরু হয়েছে। এ কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানি এই খালের সড়কবাজার অংশ দিয়ে তিতাস নদীতে প্রবাহিত হতে পারছে না।

আখাউড়া উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার প্রাণকেন্দ্রের ৩৭৫ ও ১৪৯ দাগের অংশে সবচেয়ে বেশি দূষণ ও দখল হয়েছে। শহরের ভেতরে হওয়ায় দখলদারদের নজর খালের ওপর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়কবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, সড়কবাজার এলাকায় তাঁর দোকানটি খালের ওপর নির্মিত। তবে উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বাতায়নে এ খাল সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদের সামনে কালন্দি খালের ওপর বেশ কয়েকটি দোকান। আখাউড়া থানার সামনের রাস্তার পাশে খালের দক্ষিণ দিকে স্থানীয় লোকজন নিজের বসতবাড়ির সীমানা খালের ওপর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন। এমনকি খালের ওপর নির্মিত কয়েকটি সেতুর দুই পাশও দখল করেছেন স্থানীয় লোকজন।

আখাউড়া প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্লাবের আহ্বায়ক রুবেল আহমেদ বলেন, দখল আর দূষণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ প্রায়। খালের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই চাকমা বলেন, খালটি দখল ও দূষণমুক্ত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সক্রিয় অংশগ্রহণ লাগবে। কারণ, পানি প্রবাহের রাস্তা তৈরি করতে হবে।