দলবদ্ধ ধর্ষণে জ্ঞান হারানো শিশুটিকে ঝোলানো হয় ফ্যানের সঙ্গে

টাঙ্গাইল জেলার মানচিত্র

নিজের বাড়িতে একা থাকা ৯ বছরের শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন প্রতিবেশী এক তরুণ ও দুই কিশোর। একপর্যায়ে শিশুটি জ্ঞান হারায়। এরপর তিনজন মিলে গলায় ওড়না পেচিয়ে শিশুটিকে ফ্যানের সঙ্গে (বৈদ্যুতিক পাখা) ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যান। শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির দুই দিন পর শিশুটির মৃত্যু হয়।

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার এ ঘটনায় আজ সোমবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ওই তরুণ ও দুই কিশোর। জবানবন্দিতে তাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আদালতে জবানবন্দি দেওয়া তিনজন হচ্ছেন বাসাইল উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের স্বপন মণ্ডলের ছেলে গোবিন্দ মণ্ডল (১৯) এবং একই গ্রামের দুই কিশোর (১৬ বছর ও ১৭ বছর বয়স)। এর আগে গত রোববার তাঁদের গ্রেপ্তার করেন টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের সদস্যরা।

গত ২৬ মে বিকেলে শিশুটি দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে তাকে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ মে বিকেলে তার মৃত্যু হয়। শিশুটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

আসামিদের স্বীকারোক্তির তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক খন্দকার আশরাফুল কবির। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছাম্মত রুমি খাতুন তিনজনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। পরে সন্ধ্যায় গোবিন্দ মণ্ডলকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এবং অপর দুই কিশোরকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সিরাজ আমীন আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনার পর থেকেই থানা–পুলিশের পাশাপাশি পিবিআইয়ের একটি দল তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। তারা জানতে পারে, শিশুটি ওই দিন সাড়ে ১২টায় স্কুল ও কোচিং শেষ করে বাড়িতে চলে আসে। তার মা বিকেলে শিশুটির ভাইকে স্কুল থেকে আনতে যান। এ সময় শিশুটি ঘরের মধ্যে একাই খেলা করছিল। শিশুটির মা প্রায় এক ঘণ্টা পর বাড়িতে ফিরে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে তাকে ঝুলে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। পরে ওড়না কেটে তাকে নামিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দলবদ্ধ ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। পরে মেয়েটির বাবা বাসাইল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

পুলিশ সুপার সিরাজ আমীন জানান, মামলার পর পিবিআই স্বউদ্যোগে তদন্তভার গ্রহণ করে। স্থানীয় বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোববার গোবিন্দ মণ্ডলকে বাসাইল উপজেলা সদরের কাঁচাবাজারের সামনে থেকে, অপর দুই কিশোরকে বাসাইলের কাঞ্চনপুর ও সখীপুরের বেড়বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পৃথকভাবে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা ধর্ষণ ও বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেন। আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় আজ দুপুরে তাঁদের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়।

মেয়েটির মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে যারা অমানবিকভাবে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে পরবর্তীতে আর কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়।’