দলের বর্জন, তবে তাঁরা মাঠে

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পাঁচটি ইউপি থেকে বিএনপির আট নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আগামী ১১ নভেম্বর এসব ইউপিতে ভোট গ্রহণ।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু ফরিদপুরের পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ফরিদপুরের দুই উপজেলা নগরকান্দার ৯ ও সালথার ৮টিসহ মোট ১৭টি ইউপি নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত মঙ্গলবার ছিল এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার শেষ দিন। গতকাল বুধবার প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।

যে পাঁচটি ইউনিয়নে বিএনপির নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেগুলো নগরকান্দা উপজেলায় অবস্থিত। এর মধ্যে লস্করদিয়া ইউনিয়নেই বিএনপির চার নেতা প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া কোদালীয়া শহীদ নগর, চরযশোরদী, তালমা ও ফুলসূতী ইউপি নির্বাচনে বিএনপির একজন করে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন।

নগরকান্দার লস্করদিয়া ইউপি নির্বাচনে বিএনপির যে চার নেতা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা হলেন উপজেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল, সহসভাপতি মো. আইউব মুন্সী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শওকত আলী ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম।

লস্করদিয়া ইউনিয়নটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও সাংসদ প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের বাড়ি লস্করদিয়ায়। ফরিদপুর-২ আসন থেকে ১৯৭৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সাতটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুর রহমান বিএনপি পদপ্রার্থী হিসেবে তিনবার অংশ নিয়ে তিনবারই জয়ী হন। গত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে একমাত্র প্রার্থী নির্বাচিত এই লস্করদিয়া থেকে। তিনি হলেন উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুর রহমান। এ কারণে এ বছর বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও এই ইউনিয়ন থেকে উল্লিখিত চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

লস্করদিয়া ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শওকত আলী শরিফ বলেন, দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিনি আরও বলেন, এলাকার লোক তাঁকে চায়, তিনি নির্বাচন না করলে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতো। এ জন্য তিনি নির্বাচন করছেন মূলত তাঁর সমর্থকদের ধরে রাখার জন্য।

এ ছাড়া কোদালীয়া শহীদ নগরে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুজ্জামান, চরযশোরদীতে উপজেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ রেজাউল আলম মিয়া, তালমায় উপজেলা বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মো. খায়রুজ্জামান ও ফুলসূতী ইউপিতে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মিয়া প্রার্থী হয়েছেন।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে অভিমত ব্যক্ত করে কোদালীয়া শহীদ নগর ইউনিয়নের উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

দলীয় সিদ্ধান্তে বাইরে এসে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে রফিকুজ্জামান বলেন, ‘দল কাউকে মনোনয়ন দেয়নি, আবার কেউ নির্বাচন করলে তাকে বহিষ্কার করা হবে, সে কথাও বলেনি। তারপরও যেহেতু বর্তমানে দলে আমার কোনো পদ নেই, সেহেতু বহিষ্কৃত হওয়ারও কোনো ভয় নেই।’

দুই বছর ধরে জেলা বিএনপির কোনো কমিটি নেই। জেলা বিএনপির আগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ওরফে ইছা। দল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও নেতা-কর্মীদের ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। তবে দলের কোনো নেতা বা কর্মী নির্বাচন করবে না বা করলে কী করা হবে, এ–জাতীয় কোনো সিদ্ধান্তও নেই। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের করণীয় নির্ধারণ করবেন।