দায় এড়ানোর সুযোগ নেই মালিকপক্ষের

সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরীফাইল ছবি

চামড়াশিল্পের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকার, মালিকপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তর দায়ী। তবে সবচেয়ে বেশি দায় ট্যানারির মালিকদের। এটা মালিকপক্ষের এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার মূল কাজটি শুরু হয় ট্যানারির ভেতর থেকেই। এরপর ড্রেনেজ সিস্টেম হয়ে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে (সিইটিপি) পৌঁছায়। শুরুতেই মালিকপক্ষের গাফিলতিতে পুরো প্রক্রিয়াটিতে অব্যবস্থাপনা দেখা দেয়। এমনকি তাঁরা কেমিক্যাল ব্যবহারেও সচেতন নন। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত না করায়, তরল বর্জ্যের পরিমাণও বাড়ছে।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ও বেসরকারি সংস্থা সলিডারিটি সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘কোয়ালিশন বিল্ডিং অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি মিটিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এসব কথা বলেন।

আবু নাসের খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাভারের হেমায়েতপুর চামড়াশিল্প নগরের কঠিন বর্জ্য গাজীপুরে নিয়ে পরিশোধন করতে চাচ্ছে। সেটি আসলে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। হাজারীবাগ থেকে সাভারে এই শিল্পনগরী স্থানান্তরের সময় আমরা এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু সরকার, মালিকপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিসিকের সম্মিলিত অকার্যকর ব্যবস্থাপনায় আজ এটি প্রায় ধ্বংসের পথে।’

সকাল ১০টায় ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বেসরকারি সংস্থা সলিডারিটি সেন্টারের প্রোগ্রাম অফিসার নজরুল ইসলাম, সৈয়দ আশেক মো. জেবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্ভাবনাময় চামড়াশিল্পটি আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে। কারখানার কর্মপরিবেশ ও কমপ্লায়েন্সের উন্নয়নে মালিকপক্ষের উদ্যোগ ও সরকারের তদারকি প্রত্যাশিত মাত্রায় চোখে পড়ছে না। এসব ইস্যুতে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ না পাওয়ায় ইউরোপের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে চামড়া নেওয়া বন্ধ করেছেন। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে শুধু পরিবেশবান্ধব ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার কারণে। চামড়াশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এর বিকল্প নেই।

অনুষ্ঠানে চামড়াশিল্পের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে ও অধিকতর বিকাশের লক্ষ্যে ১০টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন নজরুল ইসলাম।

প্রস্তাবের মধ্যে আছে শ্রম আইনের সঠিক বাস্তবায়ন, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ, চামড়াশিল্প নগরে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সিইটিপিকে পুরোপুরি কার্যকর করা, সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি কাঠামোর বাস্তবায়ন, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতি বন্ধ করা, রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সবিহীন বেআইনি ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করানো বন্ধ করা, ট্যানারিশিল্পকে আনুষ্ঠানিক সেক্টরের ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে আনা এবং ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করা।