দিনাজপুরে ছাগলের চামড়া ১০ আর গরুর চামড়া ২৫০ টাকায় বিক্রি

দিনাজপুর শহরের রামনগর এলাকায় চামড়ার বাজারের ছবি
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর শহরের রামনগর এলাকায় জেলার সবচেয়ে বড় চামড়ার বাজার। এই বাজারে প্রতিনি ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা দরে। আর গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা দরে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে এখানে আড়তে বিক্রি করেন।

গরুর চামড়ার প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ থাকলেও ছাগলের চামড়া কেনায় তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। সরকার চামড়ার মূল্য বৃদ্ধি করলেও ট্যানারি মালিকদের কাছে সঠিক দাম না পাওয়ায় এবং বকেয় পরিশোধ না করায এবারও লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা; সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়ার প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে দিনাজপুরে এ দাম অনুসরণ করা হয়নি।

ঈদের দিন দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত অনেকে চামড়া বিক্রি করতে এসে নামমাত্র মূল্যে ছাগলের চামড়া বিক্রি করেছেন। আড়তে চামড়া দিয়ে দাম না নিয়ে চলে যাওয়ার ঘটনাও আছে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩ টাকা মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিলেও তা কিনতে অনীহা দিনাজপুরের ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চামড়ার ব্যবসায় লোকসান গুনতে গুনতে এক–তৃতীয়াংশ ব্যবসায়ীই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। শুধু মৌসুমে কয়েকজনের আগ্রহ দেখা যায়।

দিনাজপুরে কোরবানির সময় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ছাগলের চামড়া কেনেন রফিকুল ইসলাম। সেই চামড়া রামনগর বাজারে আড়তে বিক্রি করেন তিনি। রফিকুল জানান, শুধু মৌসুমে এই চামড়া কেনাবেচা করেন তিনি। সরকারের দাম বাড়ানোর ঘোষণা শুনে চামড়া কিনেছেন ৭০টি। কিন্তু আড়তে দাম দেখে হতাশ হয়েছেন। জানালেন, ভালো মানের একটি খাসির চামড়া আড়তে তাঁকে বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী করিম মোল্লা সোমবার দুপুরে বাজারে ৪টি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন। আড়তে তাঁকে দাম বলেছেন ৮০০টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি চামড়ার দাম ২০০ টাকা। করিম মোল্লা বলেন, ৪টি চামড়া তাঁর কেনাই আছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। সেই সঙ্গে অটোভাড়া ১০০ টাকা। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে চামড়াপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে এবার।

এবার দিনাজপুরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার গরুর চামড়া ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার এবার মূল্য বৃদ্ধি করে দাম নির্ধারণ করলেও লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, এবার দিনাজপুরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার গরুর চামড়া ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার এবার মূল্য বৃদ্ধি করে দাম নির্ধারণ করলেও লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, ট্যানারি মালিকদের ইচ্ছেমতো দামেই তাঁদেরকে চামড়া বিক্রি করতে হয়। সাধারণ ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে আছেন তাঁদের কাছে। সুতরাং, দাম বাড়িয়েও সাধারণ ব্যবসায়ীদের কোনো লাভ হয়নি। তিনি আরও বলেন, একটা সময় দিনাজপুরে শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী ছিলেন। কমতে কমতে এখন ১৫ থেকে ২০জন ব্যবসাটা ধরে রেখেছেন। ২০১১ সাল থেকে ট্যানারি মালিকদের কাছে দিনাজপুরের ব্যবসায়ীদের অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি বকেয়া পড়ে আছে। নিজেরও ৮০ থেকে ৯০টাকা বকেয়া পড়ে আছে। সেই টাকা আর তুলতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।