দুই দিনের বৃষ্টির পর পঞ্চগড়ে আবার শৈত্যপ্রবাহ

জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করে সকাল সকাল নদীতে মাছ ধরছেন এক জেলে ও নুড়ি পাথর তুলছেন এক শ্রমিক। ছবিটি রোববার সকাল ৯টার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বলেয়াপাড়া এলাকায় তালমা নদী থেকে তোলা।
ছবি: রাজিউর রহমান

দুই দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে আবারও শুরু হয়েছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আজ রোববার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের এই জনপদে ঝলমলে রোদের দেখা মেলায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে।

গত দুই দিন তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকলেও থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বোচ্চ ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। দিনভর সূর্যের দেখা না মেলায় খুব বেশি বাড়তে পারেনি দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সন্ধ্যা ছয়টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন তেঁতুলিয়ায় ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। ওই দিনও দিনভর দেখা মেলেনি সূর্যের।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। চলতি শীত মৌসুমে মাঝেমধ্যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও এনিয়ে দুই দফা পঞ্চগড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে উত্তরের আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে। এতে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় দিনভর সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। বেলা বাড়ার সঙ্গে বেড়ে যায় ঝোড়ো বাতাসের পরিমাণ। দিনভর থেমে থেমে চলে বৃষ্টি। বিকেলে বাতাস ও বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেলেও সন্ধ্যার পর আবার শুরু হয় বৃষ্টি। থেমে থেমে এই বৃষ্টি চলে গতকাল ভোর পর্যন্ত। এরপর কিছু সময় বিরতি দিয়ে গতকাল বেলা ১১টার পর থেকে আবারও শুরু হয় বৃষ্টি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে দুই দিন ধরেই অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত।

আজ সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার তালমা নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন সমশের আলী (৫২) নামের এক জেলে। তিনি বলেন, ‘দুই দিন বৃষ্টি গেল এখন আবার কুয়াশা। সকালে এসেছি মাছ ধরতে কিন্তু নদীর পানিতে নেমে থাকা যায় না। ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাচ্ছে। তবুও কী করার আছে বলেন? সংসার চালাতে হলে তো মাছ ধরতেই হবে।’

তালমা নদীতে নুড়িপাথর সংগ্রহ করা পাথরশ্রমিক হাজির উদ্দিন (৫৫) বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন নদী থেকেই পাথর তুলে সংসার চালাই। কিন্তু দুই দিন ধরে বৃষ্টির কারণে নদীতে নামতে পারিনি। আজকে সকালে নদীতে এসেছি কিন্তু মনে হচ্ছে আমি বরফের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। নদীর পানি বরফের মতো ঠান্ডা লাগছে। তবে এখন রোদ উঠবে মনে হচ্ছে। সারা দিন রোদ থাকলে শান্তিতে পাথর তোলা যাবে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ বলেন, তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা আবারও কমে গিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে এই এলাকার মাটি ভেজা থাকায় আর ঘন কুয়াশার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। তবে আজ সকালে রোদের দেখা মিলেছে। এতে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তিনি বলেন, আকাশে মেঘ থাকায় এখনো মাঝেমধ্যে রোদের তীব্রতা কমে যাচ্ছে। তবে গত দুই দিনের চেয়ে আজ দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। তেঁতুলিয়ায় এই মুহূর্তে আর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। এখন এই এলাকার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আবার সামান্য বৃষ্টি হতে পারে।