‘দুই দিন ধরি ঘরে কোমরসমান পানি, রানতে পারি না’

ঘরের মেঝেতে বন্যার পানি উঠেছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের স্বজনদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে। পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে পানিবন্দী অবস্থায় ঘরেই থাকছেন প্রতিভা পাল। মঙ্গলবার সিলেট নগরের মণিপুরি রাজবাড়ি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের মণিপুর রাজবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রানী বালার (৬০) পরিবারে পাঁচজন সদস্য। কিন্তু তাঁদের জন্য খাবার রান্না করতে পারেননি গত কয়েক বেলা। আজ মঙ্গলবার তাই বাধ্য হয়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে একটি মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

গত সোমবার রানী বালার ঘরে কোমরসমান বন্যার পানি ছিল। আজ পানি আরও বেড়েছে। পানির কারণে সোমবার থেকেই ঘরের মাটির চুলায় হাঁড়ি বসেনি। বাইরে থেকে রুটি–কলা কিনে এনে খেয়েছেন পরিবারটির সদস্যরা।

আজ বেলা ১১টার দিকে মণিপুর রাজবাড়ি এলাকার শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দিরের দ্বিতীয় তলায় বসে রানী বালা বলেন, ‘ঘরে দুই দিন ধরি কোমরসমান পানি। মাটির চুলায় রানতে পারি না। বাধ্য অইয়া আইজ (মঙ্গলবার) বাইরে আওয়া লাগছে।’

রানীর সঙ্গে আলাপের সময় তাঁর মেয়ে জোসনা দাস চিড়া কলা দিয়ে মাখিয়ে পরিবারের সদস্যদের খাওয়ার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। মণিপুর রাজবাড়ি এলাকায় জোসনা দাসেরা থাকেন হানিফ মিয়ার কলোনিতে।

ঘরে বন্যার পানি ওঠায় মন্দিরের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নিয়েছেন একটি মহল্লার বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সিলেট নগরের মণিপুর রাজবাড়ি এলাকার লোকনাথ মন্দিরে
ছবি: প্রথম আলো

এই কলোনির আরেক বাসিন্দা প্রতিভা পাল (৬৮) পানিবন্দী অবস্থায় ঘরেই আছেন। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের বন্যার পর এবারই প্রথম ঘরে এত পানি ঢুকেছে। পানি বাড়ায় ঘরে থাকা দুই নাতিকে প্রতিবেশীর বাসায় পাঠিয়েছেন। টিনশেডের বাসায় এখন পুত্রবধূ ও মেয়েকে নিয়ে অবস্থান করছেন প্রতিভা পাল।

হানিফ মিয়ার কলোনিতে ২৬টি পরিবারের বাস। সোমবার দুপুর থেকে অন্তত ২০টি পরিবারের সদস্যরা ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। বাকি ছয়টি পরিবার লোকনাথ মন্দিরের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নিয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত বলেন, নর্দমার পানি উপচে কিংবা পানি আটকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন মানুষ। এলাকার পানিবন্দী হয়ে পড়া বাসিন্দাদের খোঁজখবর নিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করছেন।

শান্তনু দত্ত বলেন, তাঁর ওয়ার্ডের প্রায় সব মহল্লার বাসিন্দারা পানিবন্দী অবস্থায়। তাঁদের প্রাথমিকভাবে একটি মন্দিরসহ তিনটি স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২৫০ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বিকেল চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, নগরের ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়শিবির ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার মানুষ সেগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিকভাবে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হয়েছে। কাল বুধবার থেকে রান্না করা খাবার, ওষুধসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন