দুদকের মামলায় আক্কেলপুরের সাবেক মেয়র ও তাঁর স্ত্রী কারাগারে

গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহার
ছবি: সংগৃহীত

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে করা মামলায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ওরফে অবসর চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী ক্যাশিয়ার কামরুন্নাহার শিমুলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গোলাম মাহফুজ-কামরুন্নাহার দম্পতি আজ বুধবার বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জামিন প্রার্থনা করেন। তবে বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই দম্পতি জয়পুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরদারপাড়া আলহেরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।

দুদক বগুড়া কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহারের নামে দুদক এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায় আলাদা দুটি মামলা করা হয়েছে। কামরুন্নাহার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনে গোলাম মাহফুজকে সহযোগিতা করেছেন। গোলাম মাহফুজের নামে আলাদা একটি মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া তাঁর নামে আরও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বগুড়া দুদকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, গোলাম মাহফুজ চৌধুরী গত ২৪ মে হাইকোর্টে জামিন প্রার্থনা করলে তাঁকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে সেই মামলায় হাজির হওয়ার আগেই স্ত্রী কামরুন্নাহারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপন করার মামলায় আজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

২৫ এপ্রিল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কামরুন্নাহারের নামে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় বগুড়ার সহকারী পরিচালক নূর আলম বাদী হয়ে দুর্নীতির মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, কামরুন্নাহারের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক অভিযোগ পেয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য দুদক থেকে নোটিশ পাঠানো হয়। কামরুন্নাহার ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। বিবরণীতে ৬৪ লাখ ৪২ হাজার ২৬৭ টাকা স্থাবর, ২৭ লাখ ৪ হাজার ২৫ টাকা অস্থাবর এবং ৩৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৫ টাকা দেনা উল্লেখ করা হয়। সম্পদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দুদক কর্মকর্তারা ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৮৮ টাকার স্থাবর সম্পদ খুঁজে পান। এতে তিনি দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭২১ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

দুদকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে ৩৬ লাখ ৭ হাজার ১৬৪ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য মিলেছে, যা দুদক আইনের ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর নামে দুদক এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায় একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। ২৫ এপ্রিল দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় বগুড়ার সহকারী পরিচালক মো. নূর আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর নামে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই গোলাম মাহফুজ তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দাখিল করেন। এতে তাঁর স্থাবর সম্পদ দেখানো হয় ৭৬ লাখ ৭৭ হাজার ২৬৭ টাকা। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৯২ লাখ ২৫ হাজার ৯৩১ টাকা। একই সঙ্গে তাঁর দেনা দেখানো হয় ৬৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ টাকা। অনুসন্ধানে গোলাম মাহফুজের স্থাবর সম্পদ ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮ টাকা বের হয়ে আসে। সে হিসাবে তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮২১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক এই মেয়রের বিরুদ্ধে ৯৯ লাখ ১০ হাজার ৭৯৪ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।