দুদিন ধরে বরিশাল নগরের আবর্জনা অপসারণ বন্ধ, ভোগান্তি
বরিশাল নগরের দুদিন ধরে ময়লা–আবর্জনা অপসারণ বন্ধ করে রেখেছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এতে অস্বস্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। বিভিন্ন সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনকি বসতবাড়ি থেকেও বুধবারের পর থেকে আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা–আবর্জনা নিচ্ছেন না।
নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, বরিশাল নগরের প্রতিদিনকার বর্জ্য সাধারণত রাতের মধ্যেই ট্রাকে করে নিয়ে কাউনিয়া এলাকার পুরানপাড়া ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই কাজ করেন। কিন্তু বুধবার রাত থেকে নগরীর প্রতিটি সড়কে স্তূপাকারে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে।
তবে কেন বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, সে ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেনকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ ছাড়া প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শুক্রবার বিকেলে নগরের কাঠপট্টি, বটতলা, নবগ্রাম রোড, বিএম কলেজের সামনের এলাকা, সিঅ্যান্ডবি রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়। সিঅ্যান্ডবি রোডটি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের অংশ। এই মহাসড়কের দুই পাশে এমনকি সড়কের মাঝখানে আবর্জনার স্তূপ থাকায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এই মহাসড়কের কাশিপুর থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতে এসব বর্জ্যমিশ্রিত পানি ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তাঘাটে।
নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকার বাসিন্দারা জানান, দুই দিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ময়লা–আবর্জনা পড়ে আছে। আগে রাতের মধ্যেই সব পরিষ্কার করে নিতেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ইউএনওর সঙ্গে ঝামেলার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বর্জ্য অপসারণ করছেন না। ফলে পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে।
তিন চাকার যানের চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কাশিপুর থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত সড়কের পাশে-মধ্যে বর্জ্যের স্তূপ। ইউএনও কার্যালয়ের সামনেও বর্জ্য ফেলে রাখা হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।’
বিএম কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘বিএম কলেজের সামনে প্রফেসর গলির মুখে দুদিন ধরে বর্জ্যের স্তূপ। বৃষ্টির পানি ধুয়ে দূষিত পানি ছড়াচ্ছে। মানুষের পায়ে পায়ে ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে। এই সড়কে হাঁটাচলাও কষ্টকর।’
প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাসায় এসে ময়লা নিয়ে যেত, দুদিন ধরে তা বন্ধ। এরপর বাধ্য হয়ে রাস্তায় ময়লা ফেলে এসেছেন অনেকে।
অন্যদিকে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা–আবর্জনা সংগ্রহের কাজ বন্ধ রেখেছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। নগরের আলেকান্দা, ভাটিখানা, বটতলা, গির্জা মহল্লা এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাসায় এসে ময়লা নিয়ে যেত, দুদিন ধরে তা বন্ধ। এরপর বাধ্য হয়ে রাস্তায় ময়লা ফেলে এসেছেন অনেকে।
বটতলা মসজিদ এলাকার এক গৃহিণী বলেন, ‘ভাড়া বাড়ির পাঁচতলায় থাকি। সিটি করপোরেশনের লোকজন বাসায় এসে ময়লা নিয়ে যায়। এ জন্য তাঁরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আলাদাভাবে মাসিক পারিশ্রমিকও দেন। কিন্তু হঠাৎ ময়লা না নেওয়ায় তাঁরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাস্তায় নামলেও দুর্গন্ধে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।’
গত বুধবার বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকা এবং সদর উপজেলা পরিষদ এলাকায় ব্যানার অপসারণ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মূলত ওই সংঘর্ষের পর থেকেই নগরে বর্জ্য অপসারণ বন্ধ আছে।
সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। বুধবার রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসেন। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাঁদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তাঁরা আমাকে গালিগালাজ করেন। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালান।’
এ ঘটনায় ইউএনও এবং পুলিশ বাদী হয়ে থানায় দুটি মামলা করেছেন। দুটি মামলায়ই সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা সবাই দলীয় নেতা-কর্মী।