দুর্গাপুরে নদীর চরে দেখা মিলল লজ্জাবতী বানরের

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে একটি বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফারংপাড়া গ্রামের সোমেশ্বরী নদীর চর থেকে বানরটি উদ্ধার করা হয়। পরে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের লোকজন স্থানীয় গোপালপুর পাহাড়ে বানরটিকে ছেড়ে দেন।

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে একটি বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ফারংপাড়া গ্রামের সোমেশ্বরী নদীর চর থেকে বানরটি উদ্ধার করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

এলাকার কয়েক বাসিন্দা ও উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাত আটটার দিকে মো. আমিন খান (২৮) নামের স্থানীয় এক যুবক সোমেশ্বরী নদীর ১ নম্বর বালুমহালের ফারংপাড়া ঘাটে কাজ করতে যান। এ সময় তিনি নদীর চরে লজ্জাবতী বানরটিকে দেখতে পান। পরে তিনি কয়েকজনকে নিয়ে বানবরটি আটক করে বাসায় নিয়ে আসেন। ওই রাতেই তিনি বিষয়টি মুঠোফোনে প্রাণী রক্ষাকারী সংগঠন সেভ দ্য অ্যানিমেল অব সুসংয়ের সদস্য রাজেশ গৌড়সহ কয়েকজনকে জানান। সংগঠনের সদস্যরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও বন কর্মকর্তাদের খবর দেন।

পরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বন বিভাগের লোকজন বানরটিকে উদ্ধার করে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে চিকিৎসা করা হয়। দুপুরে উপজেলা বন কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় গোপালপুর পাহাড়ে লজ্জাবতী বানরটি অবমুক্ত করা হয়।
বন কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপুর উপজেলাটি একটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল। প্রায় সময় বানর, অজগরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী ধরা পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, লজ্জাবতী বানরটি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে এসেছিল। গত কয়েক মাস আগেও একই স্থানে একটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়।

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও বন্য প্রাণী গবেষক মো. নুরুল বাসেত প্রথম আলোকে জানান, লজ্জাবতী বানর লাজুক বানর নামেও পরিচিত। এটি দেশের ক্ষুদ্রতম বানরজাতীয় প্রাণী। বাংলাদেশে মূলত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। এগুলো নিশাচর ও বনের গভীরে উঁচু গাছে থাকতে পছন্দ করে। দিনে গাছের কোটরে বা ঘন পাতার আড়ালে ঘুমিয়ে কাটায়।

নুরুল বাসেত আরও জানান, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) লজ্জাবতী বানরকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। এরা বিরল, নিশাচর ও লাজুক হওয়ায় দিনে সহজে চোখে পড়ে না। এগুলো গাছে গাছেই থাকে এবং সহজে মাটিতে নামে না, খুব ধীরগতিতে চলাফেরা করে। এগুলো সাধারণত ফল, পাতা, উদ্ভিদের কষ খেয়ে বেঁচে থাকে। মাঝেমধ্যে এরা বড় কীটপতঙ্গ, পাখির ডিম-ছানা, সরীসৃপও খেয়ে থাকে।