দেশি শিমের নতুন জাত

বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের উদ্ভাবিত  নতুন জাতের শিম।  ছবি: প্রথম আলো
বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের উদ্ভাবিত নতুন জাতের শিম। ছবি: প্রথম আলো

আমিষসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি শিম এখন সারা বছর দেশে চাষ করা যাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ নতুন এই জাতের শিম উদ্ভাবন করেছে। বাড়তি কোনো খরচ ছাড়া এই শিম চাষ করে বছরজুড়ে ফলন পাওয়া যাবে। এর স্বাদ ও গন্ধ শীতকালীন শিমের মতোই।

নতুন জাতের বিইউ শিম-৪ উদ্ভাবনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব¡ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা) এ কে এম আমিনুল ইসলাম। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৫০-৬০ জন কৃষক নতুন জাতের শিম চাষ শুরু করেছেন। তাঁরা ফলনও পেয়েছেন ভালো। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এই জাত বাজারজাতকরণের সনদ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি শিম নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন আমিনুল ইসলাম।

আমিনুল ইসলাম বলেন, শিম আলোক সংবেদনশীল ফসল। সাধারণত অক্টোবরের শেষ দিকে শিমগাছে ফুল আসতে শুরু করে। শিমে প্রচুর ভিটামিন ও প্রোটিন রয়েছে। দেশে অনেকেই মাছ-মাংস খেতে পারেন না, তাঁদের জন্য শিম ভিটামিনের বিকল্প উৎস হতে পারে। এ চিন্তা থেকে তাঁরা শিমের নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন।

বিজ্ঞানীরা বলেন, দেশের ঘরে ঘরে শিম অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্রধান শীতকালীন সবজি। তবে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে তৎকালীন ইপসার (বর্তমানে বশেমুরকৃবি) গবেষকদের প্রচেষ্টায় দেশে আলোক অসংবেদনশীল ইপসা শিম-১ ও ইপসা শিম-২ জাত দুটি উদ্ভাবিত হয়। ফলে দেশে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। বর্তমানে সারা বছরই শিম বাজারে পাওয়া যায়। তবে স্বাদ ও গন্ধে শীতকালীন শিমের তুলনা মেলা ভার। অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম দেশে বাণিজ্যিক কৃষির প্রসারের অপার সম্ভাবনার বিষয়টি মাথায় রেখে জনপ্রিয় ও অর্থকরী সবজি দেশি শিমের চারটি গুণগত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাত উদ্ভাবন করেন, যা দেশে শিম চাষে গতিশীলতা আনবে বলে আশা করা যায়। কেননা তাঁর উদ্ভাবিত জাতগুলোর আকার-আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য, ফলন, শিমের রং, গড়ন, স্বাদ ও পুষ্টিগত গুণাগুণ বিবেচনা করলে এ সম্ভাবনার কথা অনায়াসেই বলা যায়। এগুলোর মধ্যে বিইউ শিম-৪–এর শিমে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড বেশি থাকায় এটি ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারবে। এ ছাড়া মাঝারি আগাম জাত হিসেবে বিইউ শিম-৩ আগস্ট মাস থেকেই বপন শুরু করা যায়। এটি একটি আলোক সংবেদনশীল জাত। শুঁটির রং সবুজ চ্যাপ্টা, মোটা ও বাঁশপাতার মতো এবং শাঁস অত্যন্ত নরম হওয়ায় খেতে খুবই সুস্বাদু। সারা দেশেই এটি চাষযোগ্য।

>

বাড়তি কোনো খরচ ছাড়া এই শিম চাষ করে বছরজুড়ে ফলন পাওয়া যাবে
এর স্বাদ ও গন্ধ শীতকালীন শিমের মতোই

আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিইউ শিম-৪ একটি আলোক সংবেদনশীল ও আগাম জাত। আগাম জাত হিসেবে আগস্ট মাস থেকেই এর বপন শুরু করা যায়। শুঁটির রং গাঢ় বেগুনি তবে শিরাগুলো সবুজ, ফোলা, মাংসল এবং শাঁস অত্যন্ত নরম হওয়ায় খেতে খুবই সুস্বাদু। পুষ্টি গুণাগুণেও এটি অন্যান্য শিমের তুলনায় সেরা। বিইউ শিম-৪-এ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্থোসায়ানিন বেশি থাকায় এটি ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। সারা দেশেই এটি চাষযোগ্য। প্রতিটি শিমের ওজন ১৮ থেকে ২০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ সেন্টিমিটার, শিমে পাঁচ থেকে ছয়টি বীজ হয়, গাছপ্রতি ৫৫০ থেকে ৭৫০টি শিম ধরে। জীবনকাল ১২০ থেকে ১৪০ দিন। গাছপ্রতি ফলন ১০ দশমিক ৫ থেকে ১৪ দশমিক ৫ কেজি।