দেড় মাস ধরে কাজ বন্ধ, চলাচলে চরম ভোগান্তি

হবিগঞ্জ শহরে প্রধান সড়কের এক পাশের নির্মাণকাজ করে, অপর পাশ খুঁড়ে রাখা হয়েছে দেড় মাস ধরে। গতকাল দুপুরে শহরের পুরাতন হাসপাতাল সড়ক এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জ শহরে প্রধান সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত জুনে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহরে কোর্ট মসজিদের সামনে থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তাটির আধা কিলোমিটারের কাজও শেষ করতে পারেনি। উল্টো দেড় মাস ধরে রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে শহরে চলাচলকারী মানুষের চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, শহরের কোর্ট মসজিদের সামনে থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়কটি পাথর–কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে নির্মাণের জন্য গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। আগে সড়কটি পিচঢালাই ছিল। ১০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বাজেটের কাজটি যৌথভাবে পায় সিলেটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান টেকনো বিল্ডার্স, জন্মভূমি নির্মাণ এবং ওহিদুজ্জামান চৌধুরী। গত ১৯ জানুয়ারি কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজ শেষের সময় নির্ধারিত ছিল জুন পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ১৯ জুলাই পর্যন্ত করা হয়।

১ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়কটির কাজ জুলাইয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত আধা কিলোমিটারের কাজও শেষ হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোর্ট মসজিদের সামনে থেকে শহরের সিনেমা হল সড়কের মোড় পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটারের কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাটির প্রশস্ত নয় মিটার। এর মধ্যে ওই আধা কিলোমিটারে সাড়ে চার মিটার নির্মাণ করা হয়। অপর সাড়ে চার মিটার এবড়োখেবড়ো করে রাখা হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি জমে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৮ জুলাই থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। রাস্তার বাকি অংশে কোনো কাজই হয়নি। এতে শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে এখন চলাচল প্রায় বন্ধই রয়েছে। ফলে শহরে চলাচলের অন্য সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন শহরজুড়ে লেগে থাকে যানজট।

শহরের অন্যতম বিপণিবিতান খাজা গার্ডেনের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাত্র দুই কিলোমিটার রাস্তা ১৫ থেকে ২০ দিন সময় নিয়ে নির্মাণ করা যায়। অথচ গত ছয় মাসেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আধা কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ শেষ করতে পারেনি। তারা রাস্তা খুঁড়ে রাখায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে শহরের এ সড়কনির্ভর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে।

কাজের মান ও ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন

ঠিকাদারি পেশায় জড়িত শহরের এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্রে পাথর–কংক্রিট ঢালাইয়ের এ সড়কটি উচ্চতায় দুটি স্তরে ১৩ ইঞ্চি পুরুত্ব ধরা হয়েছে। প্রথম স্তরটি হবে ২০ গ্রেড কংক্রিটের ৪ ইঞ্চি পুরুত্ব। এর ওপরের অংশটি হবে ৪০ গ্রেডের কংক্রিট দিয়ে ৯ ইঞ্চি ঢালাই। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা গেছে, এ দুটি স্তরেই ২০ গ্রেড কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী নিচের ৪ ইঞ্চি ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে ১২ মিলিমিটারের রড ব্যবহার হবে এবং ওপরের স্তরের জন্য ৩০ মিলিমিটারের রড। তাতেও এ মান বজায় রাখা হয়নি।

একই উপকরণ দিয়ে এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হয়—অপর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে প্রাক্কলিত ব্যয় চাওয়া হলে ওই প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে গড়ে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি শহরের কিবরিয়া সেতুর সামনে থেকে একই ধরনের সড়ক নির্মাণ করেছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। এতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। কিন্তু সওজ এ দুই কিলোমিটার সড়কটির প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকার ওপরে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী জয় প্রকাশ প্রথম আলোকে বলেন, লকডাউনের কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই থেকে তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু এর বিপরীতে চলতি কোনো বিল তারা পাচ্ছে না। সব মিলিয়ে এ কাজে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। কাজের মানের বিষয়ে তিনি বলেন, যতটুকু কাজ হয়েছে, তা দরপত্র অনুসরণ করেই তাঁরা করেছেন।

হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সজীব আহমেদ জানান, কাজ শিগগিরই শুরু হবে। দরপত্র অনুসরণ করেই কাজ হচ্ছে। তাঁরা তদারকি করে আসছেন। ব্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের প্রাক্কলিত ব্যয়ের হিসাব মিলবে না। কারণ, আমাদের কাজ গ্রেড অনুযায়ী করে থাকি।’