দ্রব্যমূল্য না কমলে ক্ষুব্ধ জনতা সরকারকে গদি থেকে নামাতে বাধ্য হবে: চরমোনাই পীর

বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করীম। শুক্রবার বিকেলে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে
ছবি: প্রথম আলো

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে ব্যর্থ হলে জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে সরকারকে গদি থেকে নামাতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে দেশে একধরনের দুর্ভিক্ষময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা পেটে ঘুমাতে যাচ্ছে। টিসিবির ট্রাকের পেছনে ছুটছেন মানুষ। দেশ আর এভাবে চলতে পারে না।

আজ শুক্রবার বিকেলে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে এ কথা বলেন মুহাম্মদ রেজাউল করীম। সমাবেশে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী যোগ দেন। এ কারণে সকাল থেকে নগরজুড়ে ছিল যানজট।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি দেশের আলেম-ওলামাদের নিয়ে যে তথাকথিত শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে, তা গণ–অবমাননা বলে অভিহিত করেন চরমোনাই পীর। সমাবেশে তিনি বলেন, শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের একধরনের লুকোচুরি ও মিডিয়াবাজি প্রমাণ করে যে তারা সারবত্তাহীন। শ্বেতপত্র দিয়ে নাগরিকদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াতে চাইছে তারা। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশ ও ইসলামবিরোধী। এই অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।

একটি অপশক্তি কৃত্রিম সাম্প্রদায়িকতা উপস্থাপন করে বৈশ্বিক হানাদার শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫১তম বছরে এসেও আজকের সরকার ৭১–পূর্ববর্তী সরকারের মতো নিপীড়নমূলক আচরণ করছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের কোনো অধিকার ও সম্মান নেই। সব অধিকার ভোগ করছেন ক্ষমতাসীন ও তাঁদের দোসরেরা। অথচ স্বাধীনতার পর দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা ও সম্মান পাওয়ার। বাক্‌স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল মানুষ। কিন্তু সেসব অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

চরমোনাই পীর বলেন, দেশ শাসনের নামে জনগণকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। জনগণের সব মৌলিক অধিকার হরণ ও জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করা হয়েছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ, স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও গুম–খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে সরকার।

সরকারি দলের সমর্থনপুষ্ট মধ্যস্বত্বভোগীরা স্তরে স্তরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেন বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, পথে-ঘাটে পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তানরা চাঁদাবাজি করেন। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। সরকারের ভুল মুদ্রা, শুল্ক ও আমদানি নীতি এবং অপরিণামদর্শিতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। আরও বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা ওবায়দুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ জিয়াউল করীম, জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেদায়েতুল্লাহ আজাদী, বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রমুখ।