দড়ি টেনে নৌকায় পারাপার

খালের পূর্ব পাড়ের মাদারবুনিয়া গ্রামের শিক্ষার্থী ও লোকজনকে খাল পার হয়ে আসতে হয়।

রশি টেনে নৌকা দিয়ে খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে যায় শিশু শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি রাঙ্গাবালী উপজেলার মাদারবুনিয়া খালে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার পাশাপাশি দুটি গ্রাম রসুলবাড়িয়া ও মাদারবুনিয়া গ্রাম। দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে মাদারবুনিয়া খাল। পশ্চিম পাড়ে রসুলবাড়িয়া গ্রামে পাকাসড়কসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পূর্ব পাড়ের মাদারবুনিয়া

গ্রামের শিক্ষার্থী ও লোকজনকে খাল পার হয়ে আসতে হয়। আর খাল পারাপারে একমাত্র ভরসা দড়িটানা নৌকা।

মাদারবুনিয়া গ্রামে কোনো বিদ্যালয় নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও দড়িটানা নৌকায় পার হয়ে রসুলবাড়িয়া গ্রামে যেতে হয়। প্রতিদিন অন্তত ৫০ জন শিশু দড়ি টেনে নৌকায় পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে যায়। রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালে নিতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

মাদারবুনিয়া খালের পশ্চিম পাড়ে রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৭ অক্টোবর সকালে গিয়ে দেখা যায়, তখনো বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়নি। মাদারবুনিয়া খালের পাড়ে দিকে তাকিয়ে শিক্ষকেরা অপেক্ষা করছেন। ওই গ্রামের শিশুরা খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসে। খালের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি নৌকা বাঁধা রয়েছে।

খালের দুই পাড়ে টানা লম্বা দড়ির সঙ্গে লোহার রিং এবং সেই রিংয়ের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে সেই ছোট নৌকাটি। একটি লোক নৌকাটিতে উঠে দড়ি টেনে শিশুদের কাছে নিয়ে আসার পর শিশুরা হাঁটুপানিতে নেমে একে একে নৌকায় উঠে আসে। এরপর শিশুরা নিজেরাই টানা দড়ি টেনে রসুলবাড়িয়া গ্রামের দিকে নৌকা নিয়ে যায়। খালপাড়ে আরও অনেক শিশু অপেক্ষা করছে। পরে তারাও এভাবে খাল পার হয়। বিদ্যালয় ছুটি শেষে একইভাবে তারা বাড়িতে ফিরে যায়।

রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া বলে, ‘আমরা অনেকেই নৌকা চালাতে পারি না। সবাই দড়ি দিয়ে নৌকা বেঁধে দিছে। স্কুলে আসার জন্য আমাদের দড়ি টাইনা নৌকা চালাতে হয়। কিছুদিন আগে নৌকা থেকে আমি পানিতে পড়ে গিয়েছিলাম। লোকজন আমারে পানি থেকে তোলে।’

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আসমা বলে, ‘মোরা নৌকা চালাইয়া স্কুলে আই-যাই। রশি টাইন্না নৌকা চালাইতে হয়।’

মাদারবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কামাল হোসেন বলেন, তাঁদের গ্রামে স্কুল নেই। তবে জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়।

এলাকার ইউপি সদস্য সেরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি বারবার উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় জানানো হয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা একটি নৌকার ব্যবস্থা করেছেন। তবে নৌকা চালানোর জন্য নির্ধারিত মাঝি নেই। দুই পাড়ে নৌকার সঙ্গে বাঁধা দড়ি টেনে আসা-যাওয়া করে স্কুলের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন।

সেরাজুল ইসলাম আরও বলেন, সেতু না থাকায় কৃষকেরা কৃষিপণ্য ঠিক সময়ে বাজারে নিতে পারেন না। এতে তাঁরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে বদলে যেত মাদারবুনিয়া গ্রামের চিত্র।

রসুলবাড়িয়া সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জাফর বলেন, ২১৬ জনের শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ জনের মতো রয়েছে মাদারবুনিয়া গ্রামের। শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এ খালে একটি সেতু নির্মাণ করা দরকার।

উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুল কবির বলেন, মাদারবুনিয়া খালের ওপর সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প তৈরি করে প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে পাঠানো হয়েছে। অনুদান পেলে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হবে।