ধর্মপাশায় সরকারি ত্রাণ এখনো পৌঁছায়নি দুর্গতদের মধ্যে

বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বালিজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ধর্মপাশা উপজেলার ২৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আজ দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় বন্যার পানি গত বৃহস্পতিবার রাতে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। শুক্রবার সকালেই বসতঘর-গোয়ালঘর ও রান্নাঘরের ভেতরে কোমরপানি হয়ে যায়। এ অবস্থায় বন্যার্ত মানুষজন গবাদি প্রাণীকে নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পার হলেও সরকারিভাবে এখনো বরাদ্দকৃত প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বন্যার্ত মানুষের মধ্যে পৌঁছায়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন বসতবাড়িতে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

বসতঘর ও রান্নাঘরের ভেতরে কোমরপানি হওয়ায় চার দিন ধরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের বালিজুরী গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান (৫০)। স্ত্রী–সন্তানসহ তাঁদের ৯ সদস্যের সংসার। বন্যার কারণে রান্নাবান্না বন্ধ থাকায় চিড়া–মুড়ি ও বিস্কুট খেয়ে না–খেয়ে কোনোরকমে দিন যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই কৃষক। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অন্তত ১০০ পরিবার রয়েছে, যাদের অবস্থা খুবই খারাপ।’

উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৯০ ভাগ মানুষের বসতঘরের ভেতরে বন্যার পানি ঢুকেছে। এই ইউনিয়নে ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র ৫০০-৬০০টি পরিবার বসবাস করছে। এ ছাড়া উঁচু বসতবাড়িতে গাদাগাদি করে মানুষজন বসবাস করছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে মাত্র দেড় টন চাল বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বন্যার্ত মানুষজন বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি ও খাবারের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দ্রুত বানভাসি মানুষজনের জন্য ত্রাণসহায়তা একান্ত প্রয়োজন।’

উপজেলার ধর্মপাশা গ্রামের বাসিন্দা ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য আইনজীবী মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষের বসতঘর ও রান্নাঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে বন্যার পানিতে মানুষের ঘরবাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারের জন্য সরকারিভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

রাত থেকে ধীরগতিতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে গ্রামীণ সড়কগুলো এখনো পানিতে নিমজ্জিত। আজ সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায়
ছবি: প্রথম আলো

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজার ৫৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলায় ১০ হেক্টর বিভিন্ন সবজিখেত ও ৭৩৭টি পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল রোববার রাত থেকে ধীরগতিতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে গ্রামীণ সড়কগুলো এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে স্বাভাবিক যানচলাচল এখনো শুরু হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় এ উপজেলার ২৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম শনিবার থেকে স্থগিত রয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রজেশ চন্দ্র দাস বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে বন্যার্তদের জন্য ৩০ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা বুঝে নিয়েছেন। এসব চাল বিতরণ কার্যক্রম চলমান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যার পানি ধীরগতিতে নামতে শুরু করেছে। বন্যার কারণে এ উপজেলার ২৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় বেশ কয়েক দিন ধরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ ছিল। আজ সোমবার যোগাযোগ হয়েছে। এ উপজেলার বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৮০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও বরাদ্দকৃত নগদ টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যেই পেয়ে যাব বলে আশা করছি। আমরা আরও সহায়তা চেয়েছি। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে।’