ধাওয়ায় প্রবাসীর মৃত্যু: পুলিশ সদস্যদের বাদ দিয়ে হত্যা মামলা

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পণ্ডিতসার দক্ষিণপাড়া এলাকায় পুলিশের ধাওয়ায় চান মিয়া হাওলাদার (৩৮) নামের এক ইতালি প্রবাসীর মৃত্যুর অভিযোগ করেছিল তাঁর পরিবার। ওই ঘটনায় চান মিয়ার ভাই কালু হাওলাদার বাদী হয়ে আজ বুধবার সকালে ছয়জনকে আসামি করে নড়িয়া থানায় হত্যা মামলা করেছেন। নড়িয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন ও কনস্টেবল নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে চান মিয়াকে ধাওয়া দেওয়ার অভিযোগ করা হলেও মামলায় তাঁদের আসামি করা হয়নি।

মামলার আসামিরা হলেন তুহিন পেদা (৩২), রুবেল সরদার (৩০), লিজা বেগম (২০), জাকির (২৭), রাব্বি (২৬) ও জাহাঙ্গীর (২৮)। তাঁদের বাড়ি নড়িয়া উপজেলার নিতিরা ও নলতা এলাকায়।

আমরা নিরীহ মানুষ। আমার ভাই পরপারে চলে গেছেন, তাঁকে ফিরে পাব না। আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে লড়তে পারব না। তাই পুলিশ সদস্যদের বাদ দিয়ে মামলা করেছি।
কালু হাওলাদার, বাদী

এ বিষয়ে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনি শংকর কর বলেন, মৃত চান মিয়ার ভাই যে লিখিত অভিযোগ থানায় দিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বাদী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি।

মামলার বাদী কালু হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিরীহ মানুষ। আমার ভাই পরপারে চলে গেছেন, তাঁকে ফিরে পাব না। আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে লড়তে পারব না। তাই পুলিশ সদস্যদের বাদ দিয়ে মামলা করেছি। নড়িয়া থানার ওসি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

নড়িয়া থানা ও স্থানীয় গ্রামবাসী সূত্র জানায়, নড়িয়ার পণ্ডিতসার দক্ষিণপাড়া গ্রামের চান মিয়া হাওলাদার ২০০৯ সাল থেকে ইতালির রোমে থাকেন। তাঁদের পাশের নিতিরা গ্রামের তুহিন পেদা ও নলতা গ্রামের রুবেল সরদার তাঁর সঙ্গে ইতালিতে থাকেন। সেখানে তাঁদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ২৮ জানুয়ারি চান মিয়া ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। সম্প্রতি তুহিন পেদা ও রুবেল সরদারও গ্রামে আসেন। ১৬ মার্চ চান মিয়া নড়িয়া উপজেলা সদরে গেলে তাঁকে মারধর করেন তুহিন ও রুবেল। গত সোমবার স্থানীয় ঘরিসার বাজারে আবার তাঁকে মারধর করা হয়। তখন চান মিয়ার স্বজনদের সঙ্গে তুহিন ও রুবেলের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ঘটনাটি নিয়ে সোমবার রাতে রুবেলের স্ত্রী লিজা আক্তার চান মিয়ার বিরুদ্ধে নড়িয়া থানায় একটি অভিযোগ করেন।

আমার স্বামীর সঙ্গে তুহিন-রুবেলের কী বিরোধ ছিল তা জানি না। তাঁরা তাঁকে মারধর করল, আবার পুলিশ সঙ্গে নিয়ে তাঁকে ধাওয়া করল। পুলিশ কেন তাঁদের প্রশ্রয় দিল? এখন শিশুসন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াব?
পারুল আক্তার, মৃত চান মিয়ার স্ত্রী

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ওই অভিযোগের তদন্ত করতে চান মিয়ার বাড়িতে যান নড়িয়া থানার এসআই ইকবাল হোসেন ও কনস্টেবল নাজিম উদ্দিন। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তুহিন ও রুবেল তাঁদের লোকজন নিয়ে সেখানে যান। তখন আতঙ্কে চান মিয়া দৌড়ে পালাতে যান। পুলিশ সদস্যরা ও তুহিন-রুবেল তাঁকে ধাওয়া করেন। তখন বাড়ির পাশের বিলের মধ্যে একটি পুকুরের পাড়ে পড়ে যান চান মিয়া। পুলিশ সদস্যরা তাঁকে সেখানে ফেলে রেখে চলে যান। এলাকাবাসী অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় ঘড়িসার বাজারের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখান থেকে দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে পণ্ডিতসার দক্ষিণপাড়া গ্রামে যান নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনি শংকর কর। সেখানে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামবাসী। চান মিয়ার মৃত্যুর জন্য পুলিশ দায়ী এমন স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।

চান মিয়ার স্ত্রী পারুল আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর সঙ্গে তুহিন-রুবেলের কী বিরোধ ছিল তা জানি না। তাঁরা তাঁকে মারধর করল, আবার পুলিশ সঙ্গে নিয়ে তাঁকে ধাওয়া করল। পুলিশ কেন তাঁদের প্রশ্রয় দিল? আমার স্বামী নেই। এখন শিশুসন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াব?’

ঘটনার পর অভিযুক্ত তুহিন ও রুবেল এলাকা থেকে পালিয়েছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি। আর নড়িয়া থানার এসআই ইকবাল হোসেন ও কনস্টেবল নাজিম উদ্দিনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল দিলেও তাঁরা ধরেননি।

নড়িয়া থানার ওসি অবনি শংকর কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আমাদের কাছে খবর এসেছে অভিযুক্ত তুহিন ও রুবেল আজকের ফ্লাইটে ইতালি চলে যেতে পারেন। তাঁরা যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারেন, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি।’