‘ধান-গরু ফালাইয়া যাইতাম কিলা’

ঘরে হাঁটুসমান পানি। বুধবার জুড়ী উপজেলার নয়াগ্রাম এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মর্জিনাদের ঘরের ভেতর হাঁটুসমান পানি। মাচার ওপর দুটি গরু, বাঁশের ঝুড়ি দিয়ে ঢেকে রাখা কয়েকটি হাঁস-মুরগি। এক পাশে বোরো ধানভর্তি কয়েকটি বস্তা। পানি বাড়ায় মর্জিনার স্বামী ইছরাব আলী নিজেদের থাকার জন্য বাঁশ দিয়ে আরেকটি মাচা তৈরির কাজে ব্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মর্জিনা বলে উঠলেন, ‘চাইর দিন ধরি পানির মাঝো আছি। ঘর ছাড়িয়া যাইতাম পারছি না। ধান-গরু ফালাইয়া যাইতাম কিলা।’

মর্জিনাদের বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের উত্তর জাঙ্গিরাই গ্রামে। তাঁদের মতো হাওরপারের বিভিন্ন এলাকার লোকজন বাড়িঘর না ছেড়ে পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু পানিবন্দী ওই এলাকার পরিবারগুলোর কাছে ত্রাণ কম পৌঁছাচ্ছে।

বুধবার সরেজমিনে হাওরপারের সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের উত্তর জাঙ্গিরাই, নয়াগ্রাম, ইউসুফনগর, শিমুলতলা ও ভাটি শাহপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষকে পানিবন্দী অবস্থায় দেখা যায়। পানি বাড়ায় কেউ কেউ ভেলায় করে গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে ছুটছেন। কোনো কোনো স্থানে নলকূপ ডুবে যাওয়ায় লোকজন বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকটে পড়েছেন।

বুকসমান পানিতে নেমে বন্যার্ত মানুষের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন দুই স্বেচ্ছাসেবী। বুধবার জুড়ী উপজেলার উত্তর জাঙ্গিরাই এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নয়াগ্রামের বাসিন্দা আবদুল লতিফ বলেন, উজানের পানিতে হাওর উপচে তাঁদের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাওরের পানি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় কুশিয়ারা নদী দিয়ে এসেছে। এ ছাড়া মঙ্গলবার শেষ রাতে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এতে তাঁদের এলাকায় পানি আরও বেড়ে গেছে।

উত্তর জাঙ্গিরাই এলাকায় দুই নারীকে নৌকায় কলসি নিয়ে ছুটতে দেখা যায়। তাঁরা জানালেন, নলকূপ ডুবে গেছে। পাশের উঁচু স্থানে অবস্থিত একটি মসজিদের নলকূপ থেকে পানি আনতে যাচ্ছেন তাঁরা।

সদর জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল জব্বার বলেন, সরকারিভাবে কিছু চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। চাহিদার তুলনায় তা একেবারেই কম। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ২৫০টি পানিবন্দী পরিবারকে তিনি শুকনা খাবার দিয়েছেন।

ভাটি শাহপুর এলাকায় পানিবন্দী জিতেন্দ্র বিশ্বাস বললেন, ‘আওর (হাওর) কিনারো অওয়ায় পানি আইয়া আগে আমরারে মারে। এইবার দেখিয়ার পানি বেশি। কষ্টর সীমা নাই। পানি নামলেই বাঁচি।’