ধান-চালে আইসক্রিম কেনার দিন ফুরায়নি

ধান- চালের বিনিময়ে আইসক্রিম ফেরি করতে বের হয়েছেন বোরহান মিয়া। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বিবাদিয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বাইসাইকেলের ক্যারিয়ারে বাধা বাক্সভর্তি আইসক্রিম। বিক্রেতাকে ঘিরে ধরে ধান-চালের বিনিময়ে শিশুরা আইসক্রিম কেনে। গ্রামে এটি একসময়ের চিরচেনা দৃশ্য। এখন এমনটা খুব বেশি দেখা না গেলেও একেবারে ফুরিয়ে যায়নি।

গত শনিবার গাজীপুরের কাপাসিয়ার বিবাদিয়া গ্রামে দেখা গেল এমন দৃশ্য। বোরহান মিয়া (৪৫) নামের এক আইসক্রিম বিক্রেতা ধান–চালের বিনিময়ে আইসক্রিম বিক্রি করছিলেন। তাঁর বাড়ি কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে। সাইকেলের পেছনে বাক্সভর্তি আইসক্রিম নিয়ে বিক্রি করছিলেন তিনি। সাইকেল চালানো অবস্থায় কিছুক্ষণ পরপর তিনি বাক্সের উপরের অংশ সজোরে বন্ধ করতে করতে আওয়াজ তুলেছিলেন। আর সেই আওয়াজে সড়কের আশপাশের বাড়ি থেকে শিশুরা বের হয়ে তাঁকে থামিয়ে আইসক্রিম কিনছে। আইসক্রিম কিনতে আসা শিশুদের মধ্যে প্রায় সবার হাতেই ধান কিংবা চাল। বিক্রেতা সেগুলো হাতে নিয়ে আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে এর বিনিময়ে আইসক্রিম তুলে দিচ্ছেন শিশুদের হাতে।

আইসক্রিম বিক্রির এই পেশায় বোরহান মিয়া আছেন প্রায় ১৫ বছর ধরে। স্ত্রী-সন্তানসহ পুরো সংসার চালান আইসক্রিম বিক্রির টাকায়। তবে ধানের মৌসুমে তাঁকে কৃষিকাজও করতে হয়। বছরে সাত-আট মাসের মতো আইসক্রিম বিক্রি করেন।

বোরহান মিয়া বলেন, তাঁদের পরিবারে আরও বেশ কয়েকজন আইসক্রিম বিক্রির কাজ করেন। অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এখনো আইসক্রিম বিক্রি ধরে রেখেছেন। প্রকৃতিতে শীত নেমে এলে আইসক্রিম বিক্রি হয় না। তবে গরম পড়তে শুরু করলে প্রায় প্রতিদিন আইসক্রিম ফেরি করতে বের হন তিনি। কাপাসিয়ায় বেশ কয়েকটি আইসক্রিম কারখানা আছে। তিনি বিভিন্ন কারখানা থেকে আইসক্রিম সংগ্রহ করে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েন। এক বাক্স আইসক্রিম বিক্রি করতে পারলে শ পাঁচেক টাকার ধান-চাল নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন। কোনো কোনো দিন ৩ বাক্স পর্যন্ত আইসক্রিম বিক্রি হয়। বোরহান মিয়ার বাক্সে থাকা আইসক্রিমের মূল্য ৫ থেকে ১০ টাকার মধ্যে।

আইসক্রিমের বিপরীতে সংগ্রহ করা ধান–চাল বোরহান মিয়া পাইকারি দরে বাজারে বিক্রি করেন। এই পেশায় কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালোই তো। বেচাকেনা আছে। পোলাপান এই আইসক্রিম পছন্দ করে। প্যাকেট আইসক্রিমের দাম তো অনেক, ২০-৫০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। এই জন্য এই আইসক্রিমের চাহিদা আছে।

আইসক্রিম কিনতে আসা এক শিশুর সঙ্গে কথা হয়। সে এক বাটি চাল নিয়ে এসে সাতটি আইসক্রিম পেয়েছে। শিশুটি জানায়, বাড়িতে আরও পাঁচ-ছয়জন আছে। তাদের জন্য আইসক্রিম কিনে নিচ্ছে সে। আরেকটি শিশু বলে, সে শহরের স্কুলে পড়ে। ওই স্কুলের পাশে পাওয়া আইসক্রিমের দাম বেশি। তা ছাড়া বাক্স থেকে কেনা আইসক্রিম খেতে ভালো লাগে তার।

বোরহান মিয়া বলেন, ধান-চাল দিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করলে নগদ টাকার চেয়ে বেশি লাভ থাকে। তবে এ জন্য নগদ অর্থে বিক্রির চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তাই আজকাল ধান-চালে আইসক্রিম বিক্রি উঠে যাচ্ছে।