ধুনটে আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ২৫

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। শনিবার ধুনট উপজেলা পরিষদ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার ধুনট উপজেলার আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে ধুনট উপজেলা পরিষদ সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাউদ্দৌলা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ হারুন, চিকাশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা হেলাল উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সাজেদুল ইসলাম, যুবলীগের সদস্য সুজন, বলয় মণ্ডল, ছাত্রলীগের সদস্য রাজু সুলতান, রুবেল, আরিফ, নাসিম, হৃদয়, আকাশ। অন্যপক্ষের আহত ব্যক্তিরা হলেন পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুজন সাহা, পৌর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুস ছাত্তার ও যুব শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীনুর আলম। প্রাথমিকভাবে আহত অন্যদের নাম জানা যায়নি।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিন মাস ধরে উপজেলা পরিষদের সরকারি বরাদ্দের অর্থ বণ্টন নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাইয়ের সঙ্গে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের (ইউপি) বিরোধ চলে আসছে। একপর্যায়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে ১০টি ইউপির চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসকের কাছে অনাস্থা প্রস্তাবের প্রস্তুতির জন্য শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের হলরুমে বৈঠকে বসেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বৈঠকটি পণ্ড করার চেষ্টা চালান। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টি আই এম নুরুন্নবী তারিক বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাবের নেপথ্যে নেতৃত্ব দেন বগুড়া-৫ আসনের সাংসদ হাবিবর রহমানের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসিফ ইকবাল। এর প্রতিবাদ করায় আসিফ ইকবালের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আসিফ ইকবাল বলেন, ‘আমি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহসীন আলমের সঙ্গে পরিষদের বাইরে অবস্থান করছিলাম। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতা-কর্মীরা আমার নেতা-কর্মীর ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বলেন, ‘আমার বিষয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের কোনো বিষয় ছিল না। উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ বণ্টনে দলীয় ভাগ নিয়ে সাংসদের সঙ্গে আমার বিরোধ হয়। শুক্রবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। সেই হিসেবে আজ সব ঘটনা সমাধান করার জন্য সকাল ১০টার দিকে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছিল। এর আগেই সাংসদের ছেলে আসিফ ইকবালের নেতৃত্বে আমার নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে পরিষদের নামে বরাদ্দ করা উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বণ্টন নিয়ে বিরোধ চলছে। এ কারণে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই ৩ মাস ধরে সমন্বয় কমিটির সভায় আসেন না। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়াম্যানের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছে অনাস্থা প্রস্তাব পাঠানোর প্রস্তুতির বিষয়ে তাঁর জানা নেই।