‘ধূমপান করতে নিষেধ করায়’ সাংবাদিককে ছাত্রলীগ নেতার মারধর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের টিভি কক্ষে ‘ধূমপান করতে নিষেধ করায়’ এক সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের টিভি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার সাংবাদিকের নাম শাহাবুদ্দীন আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও অনলাইন পোর্টাল বিডিমর্নিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।

শাহাবুদ্দীন মারধরের অভিযোগ তুলেছেন মাদার বখশ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী গিয়াসউদ্দিন কাজলের বিরুদ্ধে। গিয়াসউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। প্রথম আলোর কাছে তিনি দাবি করেন, শাহাবুদ্দীনই প্রথমে তাঁকে আঘাত করেছিলেন। এ জন্য তিনি পাল্টা আঘাত করেন।

ঘটনার সময় টিভি কক্ষে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাতে টিভি কক্ষে আইপিএলের ম্যাচ দেখার সময় কাজল ধূমপান করছিলেন। তখন শাহাবুদ্দীন তাঁকে বাইরে ধূমপান করতে বলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা গিয়াসউদ্দিন তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে শাহাবুদ্দীনকে মারধর করেন। এতে শাহাবুদ্দীন কানে আঘাত পান ও তাঁর পোশাক ছিঁড়ে যায়। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে গিয়াসউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (শাহাবুদ্দীন) আমার সঙ্গে শুরু থেকেই খুব আগ্রাসী আচরণ করছিলেন। একপর্যায়ে তিনি আমার দিকে তেড়ে এলে আমার দুই বন্ধু তাঁকে প্রতিহত করেন। তিনি আমাকে গালিগালাজ করছিলেন। একপর্যায়ে আমাকে একটি লাথি মারেন। আর শেষে আমিও একটি লাথি মেরেছি। কিন্তু তিনি কেবল আমার কথাই বলছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাংবাদিককে মারধরে অংশ নেওয়া গিয়াসউদ্দিনের দুই সহযোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তবে তাঁরা ওই হলের আবাসিক ছাত্র নন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি জানার পর হল প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েছেন তিনি। আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন তিনি।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস না পাওয়ায় গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে শাহাবুদ্দীনের সহপাঠীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও মো. সুলতান-উল-ইসলাম, প্রাধ্যক্ষ শামীম হোসেন, প্রক্টর আসাবুল হক সেখানে আসেন। তাঁরা আজ সোমবার আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে বিক্ষোভকারীরা আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ স্থগিত করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এটি অত্যন্ত অনাকাঙ্খিত ও গর্হিত কাজ হয়েছে। গিয়াসউদ্দিন অনাবাসিক ছাত্র, তাঁকে হল থেকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। তাঁদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।