নওগাঁর অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ

আজ সকাল থেকে শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি
প্রথম আলো

মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বের জেরে নওগাঁ জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে আজ বুধবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতি। এতে সকাল থেকে শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে শহরের পার-নওগাঁ আন্তজেলা বাসটার্মিনাল থেকে অন্য জেলার মালিক সমিতির কিছু বাস আন্তজেলা রুটে চলাচল করছে।

হঠাৎ করে কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। জেলার অভ্যন্তরীণ কোনো রুটে বাস চলাচল না করায় শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেক যাত্রীকে বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানে চড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। নওগাঁ জেলা মালিক সমিতির বাস চলাচল বন্ধ ও আন্তজেলা রুটে কম বাস চলাচল করায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লাগামী যাত্রীরাও দুর্ভোগে পড়েছে।

মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অবৈধভাবে আন্তজেলা রুটে বাস চালানোর অভিযোগে অনির্ষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট শুরু করেছে নওগাঁ জেলা বাসমালিক সমিতি।

নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের লোকজনের চাঁদাবাজি সীমাহীন আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া রুট পারমিট না নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জোর করে তাঁদের নিজেদের বাস বিভিন্ন রুটে চালাচ্ছেন। এভাবে বাস চালানো অবৈধ। বারবার বলা সত্ত্বেও চাঁদাবাজি ও অবৈধভাবে বাস চলাচল বন্ধ না করায় মালিক সমিতি বাধ্য হয়ে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের লোকজনের চাঁদাবাজি সীমাহীন আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া রুট পারমিট না নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জোর করে তাঁদের নিজেদের বাস বিভিন্ন রুটে চালাচ্ছেন। এভাবে বাস চালানো অবৈধ। বারবার বলা সত্ত্বেও চাঁদাবাজি ও অবৈধভাবে বাস চলাচল বন্ধ না করায় মালিক সমিতি বাধ্য হয়ে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতি

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, নওগাঁ জেলার মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে বগুড়ায় জাতীয় পরিবহন মোটরশ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ে রাজশাহী বিভাগের বাসমালিক ও শ্রমিকনেতাদের মধ্যে সম্প্রতি একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শ্রমিক কিংবা মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে কেউ রাস্তায় যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি করতে পারবেন না। এ ছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ রুট ছাড়া মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের কোনো গাড়ি আন্তজেলা রুটে চলাচল করতে পারবে না। বৈঠকের দিন সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও পরবর্তী সময়ে আবার সিদ্ধান্ত অমান্য করে আগের মতো চাঁদাবাজি ও নিয়মবহির্ভূতভাবে নওগাঁ-পাবনা ও নওগাঁ-কিশোরগঞ্জ রুটে বাস চালাচ্ছেন শ্রমিকনেতারা। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা তাঁদের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করা পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

পাবনা ও কিশোরগঞ্জ রুটে নওগাঁ জেলার কোনো পরিবহন এত দিন ছিল না। এতে শ্রমিকেরা বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন। তাই শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের টাকা দিয়ে কেনা দুটি বাস দুই মাস ধরে নওগাঁ-পাবনা ও নওগাঁ-কিশোরগঞ্জ রুটে ছাড়া হয়। এতে মালিকপক্ষের বাধা দেওয়াটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এ ছাড়া চাঁদাবাজির যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মতিউজ্জামান, সভাপতি, নওগাঁ জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন

এদিকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নওগাঁ জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মতিউজ্জামান বলেন, পাবনা ও কিশোরগঞ্জ রুটে নওগাঁ জেলার কোনো পরিবহন এত দিন ছিল না। এতে শ্রমিকেরা বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন। তাই শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের টাকা দিয়ে কেনা দুটি বাস দুই মাস ধরে নওগাঁ-পাবনা ও নওগাঁ-কিশোরগঞ্জ রুটে ছাড়া হয়। এতে মালিকপক্ষের বাধা দেওয়াটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এ ছাড়া চাঁদাবাজির যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

মতিউজ্জামান বলেন, ‘করোনার কারণে সাত-আট মাস ধরে শ্রমিকেরা পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। অথচ প্রতিটি গাড়ি থেকে মালিক-শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের নামে ৪০০ টাকা করে জমা রাখা হয়। সেই ফান্ড থেকে একটি টাকাও অসহায় শ্রমিকদের জন্য খরচ করা হয়নি। করোনা সংকটের সময় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মালিক সমিতির নেতাদের কাছে আরজি জানিয়ে একটি টাকাও পাননি কোনো শ্রমিক। আজ শ্রমিকদের কষ্টার্জিত টাকায় কেনা বাস চালিয়ে যখন শ্রমিকেরা কটা টাকা আয় করছেন, তখন মালিকদের গায়ে জ্বালা করা শুরু করেছে। মালিকেরা যে দাবিতে গাড়ি বন্ধ করে শ্রমিকদের পেটে লাথি মারছেন, সেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অমানবিক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানের জন্য বাস মালিক সমিতি ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সন্ধ্যায় ডাকা হয়েছে। আশা করছি দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এর একটা সমাধান করা যাবে।’