গড়াই ও মধুমতী নদ–নদীর ভাঙনে মাগুরার শ্রীপুর ও মহম্মদপুর উপজেলার প্রায় এক ডজন গ্রামের কয়েক শ মানুষ সম্প্রতি বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ ভাঙনের জন্য নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনকে দায়ী করছেন। জেলা প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে, নদীভাঙনের সঙ্গে বালু উত্তোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।
নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের একজন মহম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের শিমুল মিয়া বলেন, এখান থেকে সরকার বছরে মাত্র কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে, কিন্তু বালু তোলার জন্য কয়েক বছর ধরে নদী ভাঙছে। এখানকার মানুষের চোখে ঘুম নেই।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরে মহম্মদপুর উপজেলায় মধুমতীর ভাঙনে চর ঝামা, হরেকৃষ্ণপুর, মহেশপুর, দেউলি, দিকমাঝি ও ভোলানাথপুর গ্রামের অনেকখানি বিলীন হয়েছে। আর শ্রীপুরে গড়াই নদের ভাঙনের শিকার হয়েছে বদনপুর, টিকারবিলা, গঙ্গারামখালীসহ বেশ কিছু এলাকার মানুষ। স্থানীয় মানুষের দাবি, ভাঙনে নদে বিলীন হয়েছে শতাধিক বসতবাড়িসহ কয়েক শ একর জমি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো একটা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে হলে তার আগে নদীর পানিপ্রবাহের একটি সমীক্ষা হওয়া দরকার। এটি ছাড়া বালু তুললে ভাঙন দেখা দেবেই।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভাঙন ঠেকাতে গত দুই বছরে মহম্মদপুর ও শ্রীপুরে মোট ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করলে নদীর উপকার হয়। তবে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করলে নদীভাঙন হতে পারে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা জেলায় ইজারাযোগ্য তিনটি বালুমহাল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে শ্রীপুর উপজেলায় রাজধরপুর ও ঘসিয়াল বালুমহাল এবং মহম্মদপুরে ঝামা বালুমহাল। শ্রীপুরের রাজধরপুর বালুমহালের কাছেই গড়াই সেতু। বালু উত্তোলনে সেতুর কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
তবে মাগুরার জেলা প্রশাসক ও জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর স্রোতোধারা বাধাপ্রাপ্ত হলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পলি জমে বড় বড় চর তৈরি হওয়ায় ভাঙন বাড়ছে। বালু যে উত্তোলিত হচ্ছে, তা নদীর তলা কেটে নয়। স্রোতের সঙ্গে যে পলি আসছে, সেটাই বালু হিসেবে উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে তো ভাঙন আরও কম হওয়ার কথা। আমরা দেখেছি মহম্মদপুর ও শ্রীপুরে যে ভাঙন হচ্ছে, তা বালু উত্তোলনের কারণে নয়, এর জন্য অন্য কোনো কারণ দায়ী।’
নদীভাঙন ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে যে অভিযোগগুলো আসে, সেগুলোর দেখভাল করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব ড. কামাল উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সারা দেশেই নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। এটা মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখে এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া।