নরসিংদীতে ইউপি নির্বাচন ঘিরে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ২

নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। আজ সকালে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল পাড়াতলীতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পাড়াতলী ইউনিয়নের কাচারিকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

নিহত দুজন হলেন কাচারিকান্দি গ্রামের মলফত আলীর ছেলে সাদির মিয়া (১৯) ও আসাদ মিয়ার ছেলে হিরণ মিয়া (৩৫)। আহত ব্যক্তিদের  রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় দুই পক্ষই বর্তমানে সক্রিয়। এর মধ্যে শাহ আলম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুদুর রহমানের সমর্থক। অন্যদিকে, ফজলুল হকের ছেলে শাহ আলম আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌস কামালের সমর্থক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাড়াতলীর কাচারিকান্দি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউপি সদস্য শাহ আলমের সঙ্গে সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুল হকের ছেলে শাহ আলমের বিরোধ চলছে। এর জেরে প্রায়ই দুই পক্ষের সমর্থকেরা টেঁটা, বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এদিকে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় দুই পক্ষই বর্তমানে সক্রিয়। এর মধ্যে শাহ আলম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুদুর রহমানের সমর্থক। অন্যদিকে ফজলুল হকের ছেলে শাহ আলম আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌস কামালের সমর্থক।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ মে ওই এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় সংঘর্ষে ৩ জন নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছিলেন। এর পর থেকে ইউপি সদস্য শাহ আলমের পক্ষের লোকজন গা ঢাকা দেন। ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁরা আবার এলাকায় ফিরে এলে বিরোধীপক্ষের লোকজনের সঙ্গে টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এতে টেঁটা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইউপি সদস্য শাহ আলমের পক্ষের লোকজন দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া থাকার পর আজ এলাকায় ফিরে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁদের গুলিতে তাঁর দুজন কর্মী-সমর্থক মারা গেছেন এবং ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।
ফেরদৌস কামাল, আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থী

রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সাইয়িদ মো. ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে গুলিবিদ্ধ দুজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে বলা যায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া একই ঘটনায় টেঁটা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সাতজনকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য শাহ আলম ও ফজলুল হকের ছেলে শাহ আলম—দুজনের সঙ্গেই একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাঁদের দুজনেরই মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

পাড়াতলী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফেরদৌস কামাল জানান, ফজলুল হকের ছেলে শাহ আলম নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন। অন্যদিকে, ইউপি সদস্য শাহ আলম বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির মেজবাউদ্দিন আবু নূরের হয়ে কাজ করছেন। ইউপি সদস্য শাহ আলমের পক্ষের লোকজন দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া থাকার পর আজ এলাকায় ফিরে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁদের গুলিতে তাঁর দুজন কর্মী-সমর্থক মারা গেছেন এবং ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।

এদিকে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদুর রহমান জানান, ‘যেহেতু নির্বাচনের মাঠে আছি, সেহেতু শুধু ইউপি সদস্য শাহ আলম কেন, এই এলাকার সবাই আমার কর্মী। তবে আজকের এই হামলা ও সংঘর্ষের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। শুধু শুনেছি গোলাগুলি হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছেন, দুজন মারা গেছেন। কারা এর সঙ্গে জড়িত, সেটা জানি না।’

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, ইউপি নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।