নাটোরে সাংসদের ভাগনের বিরুদ্ধে প্রকৌশলীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ, মামলা

প্রকৌশলী আবু রায়হান। সোমবার সন্ধায় নাটোর সদর হাসপাতালে।
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি কাজে নিম্নমানের টাইলস ব্যবহারে সম্মত না হওয়ায় নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে (৩৮) হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ঠিকাদার নাফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে।

নাফিউল ইসলাম নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলামের ভাগনে ও নাটোর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বাবা ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ।

আমিরুল ইসলাম প্রকৌশলীকে মারপিট করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ছেলে বয়সে তরুণ। রাগের মাথায় তাঁর (প্রকৌশলী) সাথে শুধু কথা-কাটাকাটি করেছে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়নি। মারপিট করার অভিযোগ সত্য নয়।’ নাফিউল ইসলামের ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নাটোর থানায় করা এজাহার সূত্রে জানা যায়, নাটোর পাউবো কার্যালয় চত্বরে একটি ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পান রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান। তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ভবনটি নির্মাণ করছিলেন নাটোরের ঠিকাদার নাফিউল ইসলাম ও তাঁর বাবা আমিরুল ইসলাম। গতকাল সোমবার দুপুরে আমিরুল ইসলাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে ফোন করে বলেন, তাঁর (নির্বাহী প্রকৌশলী) নির্দেশিত টাইলস ভবনে লাগানো যাবে না। ওটা লাগালে খরচ বেশি হবে। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে নাফিউল ও আমিরুল তাঁদের ব্যবস্থাপক রাজিব হোসেনকে নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে নাফিউল প্রকৌশলীর গলা চেপে ধরেন এবং কিলঘুষি মারতে থাকেন। এতে তাঁর ঠোঁট কেটে রক্ত বের। এ সময় অফিসের অন্য লোকজন এগিয়ে এসে তাঁকে রক্ষা করেন। প্রকৌশলী তাৎক্ষণিক ঘটনাটি নাটোরের পুলিশ সুপারকে জানান। আহত প্রকৌশলীকে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁকে রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় গতকাল রাত সোয়া ১১টায় নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বাদী হয়ে নাফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

আবু রায়হান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, তিনি রাজশাহীতে নিজ বাসায় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন। গলা ও বুকে ব্যথা অনুভব করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সোমবার বিকেলে নাটোরের বাসায় ছিলাম। বিকেল পাঁচটার দিকে ঠিকাদার আমিরুল সাহেব আমাকে অফিসে আসতে বলেন। আমি অফিসে গেলে তিনি গালিগালাজ শুরু করেন। আচমকা সেখানে তাঁর ছেলে এসে আমার গলা চেপে ধরে কিলঘুষি মেরে হত্যার চেষ্টা করেন। অফিসের লোকজন এসে আমাকে বাঁচিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি জেনেছি, মামলায় হত্যাচেষ্টার ধারা যুক্ত করা হয়নি এবং শুধু একজনকে আসামি করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে তাঁর কোনো অভিযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো আইনের এত সব বুঝি না। পুলিশ সবকিছু দেখছে।’

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, প্রকৌশলীর কাছ থেকে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে অভিযুক্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রকৌশলীর দেওয়া লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। এজাহারে বর্ণিত আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ৩০৭ ধারা এজাহারে সংযুক্ত না হওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, বিষয়টি ভুল হতে পারে। যদি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তদন্তে আসে, তাহলে পরবর্তী সময়ে ওই ধারা সংযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।