‘নানা রে, আমরা তো হারাইয়া গেছি...।’ সাত বছরের নাতি আহাদের সঙ্গে মুঠোফোনে সর্বশেষ এ কথাই বলেছিলেন সালমা বেগম (৩৮)। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবিতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিও রয়েছেন। গতকাল রোববার বেলা দুইটার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর মাহমুদনগর কলাবাগান এলাকায় এই নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। রূপসী-৯ নামের পণ্যবাহী কার্গোর ধাক্কায় অন্তত ৩০ যাত্রীসহ এমএল আফসারউদ্দিন নামের ওই লঞ্চ ডুবে যায়। লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে যাচ্ছিল। এ সময় আসমার সঙ্গে তাঁর ছোট মেয়ে ফাতেমাও (৭) নিহত হয়।
সালমা বেগমের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ভাজনা কদমতলা গ্রামে। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে সেখানে সালমা বেগম ও তাঁর মেয়ে ফাতেমা আক্তারের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত ব্যক্তির বাড়িতে চলছে স্বজনদের মাতম।
সালমার বড় মেয়ে রিপা আক্তার (২২) বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার মা ছোট ভাইবোনদের নিয়ে বাবার সঙ্গে ঢাকার মুন্সিগঞ্জে থাকেন। আমার বাবা মুন্সিগঞ্জ কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। রোববার মা আমার ছোট বোন ফাতেমাকে নিয়ে বরিশালে আমার বাসায় বেড়ানোর উদ্দেশে রওনা দেন। মুন্সিগঞ্জ থেকে সদরঘাট আসার কথা কিন্তু ভুল লঞ্চে চলে যান নারায়ণগঞ্জে। সেখান থেকে আবার এমএল আফসারউদ্দিন লঞ্চে সদরঘাট ফিরছিলেন। কার্গোর সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা লাগার আগে মোবাইলে আমার ছোট ছেলে আহাদের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় মায়ের। তিনি বলেন, “নানা রে, তোমাকে দেখার জন্য আসতেছি কিন্তু আমরা তো হারাইয়া গেছি। আমরা ভুলে নারায়ণগঞ্জ চলে আসছি। এখন আবার সদরঘাট ফিরতেছি। সেখান থেকে বরিশালের লঞ্চে উঠে তোমার কাছে আসব।” কিন্তু নাতির কাছে ফেরা হলো না।’
সালমার স্বামী কাঠমিস্ত্রি ইউনুস খলিফা বলেন, ‘মেয়েজামাইয়ের বাড়িতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে আমার স্ত্রী দুপুর বারোটার দিকে মুন্সিগঞ্জের বাসা থেকে বের হয়। যাওয়ার কথা সদরঘাটে কিন্তু ভুল লঞ্চে চলে যায় নারায়ণগঞ্জে। সেখান থেকে ফেরার পথে কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চডুবিতে আমার স্ত্রী সালমা বেগম ও ছোট মেয়ে ফাতেমা মারা গেছে। রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশ ফোন করে আমাকে খবর দেয়। আমি লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসি।’