আব্বায় মাস শেষে টাকা পাঠাইতো, এখন পাঠাইবে কে

নিহত আবুল বাসারের স্ত্রী ও মেয়ের আহাজারি। সোমবার বেলা ১১টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামেছবি: অজয় কুন্ডু

পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন আবুল বাসার মোল্লা (৪০)। নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। তাঁর অকালমৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না স্ত্রী ও সন্তানেরা। স্বজন হারানো শোকের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়েও তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন।

শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হন ৩৭ জন। দগ্ধ লোকজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আবুল বাসার মোল্লা রোববার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর গ্রামে। আজ সোমবার সকালে নিজ গ্রামে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
আবুল বাসার নারায়ণগঞ্জের একটি ওষুধ কোম্পানির মেশিন অপারেটর ছিলেন। যে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তার পাশে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকতেন।

নিহত আবুল বাসারের স্ত্রী তাজিয়া বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। সোমবার মাদারীপুর সদর উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামে
ছবি: অজয় কুন্ডু

সকালে আবুল বাসারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে মানুষের ভিড়। পরিবারের সদস্যরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
স্বামীর কথা জানতে চাইলে তাজিয়া বেগম বলেন, ‘ওগের বাজানে আমাগো এইভাবে ছাইড়া চইল্লা যাইতে পারে না। পাঁচ পোলা–মাইয়া লইয়া আমি কার কাছে হাত পাতুম। বড় পোলাডা কলেজে পড়ে, তিনডা মাইয়া এখনো ছোট। ছোট পোলাডা ওর বাজানরে ছাড়া কিছুই বুঝে না। খালি কয় বাজান কই মা, বাজানের কাছে লইয়া যাও।’
তাজিয়া বেগম জানান, শনিবার সকালে তাঁর (আবুল বাসার) সহকর্মীদের কাছ থেকে মুঠোফোনে দুর্ঘটনার খবর পান। সকালে তিনি ছেলেকে নিয়ে চলে যান ঢাকায়। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অভ্যর্থনাকক্ষে অপেক্ষা করতে থাকেন। রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে খবর আসে তিনি (আবুল বাসার) আর নেই। রাতেই স্বামীর লাশ নিয়ে বাড়িতে রওনা হন।

আবুল বাসারের বড় ছেলে হাবিবুর বাসার স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আব্বায় মাস শেষে টাকা পাঠাইত। সেই টাকায় আমার সব ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ চলত। এখন আর টাকা পাঠাইবে কে? আমাদের সবার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেল।’