নিখোঁজের পাঁচ বছর পর বাড়ি ফিরল কিশোরী

নিখোঁজ হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর কিশোরী সুমি আক্তার তার পরিবারে ফিরেছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টুকের বাজার গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

নিখোঁজের প্রায় পাঁচ বছর পর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছে সুমি আক্তার নামে এক কিশোরী। রোববার রাতে মেয়েটি বাড়িতে ফেরে। এতে খুশি কিশোরীর স্বজনেরা।

সুমি আক্তার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের টুকের বাজার গ্রামের আলী আকবরের মেয়ে। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিবেশী এক নারীর মাধ্যমে ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজের জন্য গিয়েছিল সুমি আক্তার। তখন তার বয়স ছিল ১১ বছর। ঢাকার ওয়ারী থানার টিকাটুলী খাটখলা এলাকার ফয়েজ আহমদ নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজে যোগ দেয় সুমি। কিছুদিন ওই বাড়িতে কাজ করার পর সে নিখোঁজ হয়।

এ ঘটনায় ঢাকার ওয়ারী থানায় নিখোঁজের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সুমির পরিবারের সদস্যরা। সেই সঙ্গে সুমির বাবা আলী আকবর ও মা জোসনা বেগম ঢাকায় মেয়ের সন্ধান করে না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শ স্কুল এলাকায় রহিমা বেগম নামে এক নারীর বাড়িতে সন্ধান মেলে সুমির। শেষ পর্যন্ত রোববার রাতে মেয়েটি তার টুকের বাজার গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছে।

সুমি আক্তার জানায়, পাঁচ বছর আগে পাশের বাড়ির আমিনা নামের এক খালার মাধ্যমে ঢাকায় বাসার কাজের জন্য যায় সে। কয়েক মাস কাজ করার পরে বাসার লোকজন বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একদিন বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। গ্রামের বাড়ির ঠিকানা মনে না থাকায় সে পরিবারের কাছে আর ফিরতে পারেনি। পরে আরেক খালার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের রাহিমা বেগম নামের এক নারীর বাড়িতে সে আশ্রয় পায়।

রহিমা বেগম বলেন, ‘নিজের সন্তানের মতো সুমিকে ঘরে রেখেছি। সুমিকে যখন আমার বাড়িতে নিয়ে আসি, তখন সে ঠিকানা বলতে পারত না। শুধু পিতা-মাতার নাম ও টুকের বাজার বলতে পারত। তার দেওয়া ঠিকানা খুঁজতে আমার পাশের বাড়ির হৃদয় আহমদ কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের রিপন আহমদ ও মোর্শেদ আলমের মাধ্যমে সুমির পরিবারকে খুঁজে পান। খবর পেয়ে সুমির মা–বাবা সিলেট থেকে খাইরুল আমিন ও কবির আহমদ নামের দুই ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন। পরে বিস্তারিত কথা বলার পর নিশ্চিত হয়ে সুমিকে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করি।’

প্রায় পাঁচ বছর পর মেয়েকে খুঁজে পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন সুমির মা জোসনা বেগম। রহিমা বেগম ও তাঁর পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জোসনা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এখনো মমত্ববোধ থাকায় পৃথিবী এখনো টিকে আছে। একটি পরিবার থেকে মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেও আরেকটি পরিবার তাকে আগলে রেখে অবশেষে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। এটি আমার জন্য বড় পাওয়া।’