নিম্নমানের চাল সরবরাহ

২০ দিনে ফেরত পাঠানো হয়েছে অন্তত ৩০ ট্রাক চাল, যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে চার শ টন।

ফাইল ছবি

কুষ্টিয়ায় বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহে মিলমালিকদের বিরুদ্ধে সরকারি গুদামে নিম্নমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে গত ২০ দিনে ফেরত পাঠানো হয়েছে অন্তত ৩০ ট্রাক চাল, যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে চার শ টন।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো কোনো মিলমালিক ভাঙা দানা, লাল চাল ও আর্দ্রতা বেশি হওয়া চাল সরবরাহ করেছেন। সেসব চাল ফেরত পাঠানো হয়েছে। নীতিমালা মেনে চাল নেওয়া হবে। তবে মিলাররা পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, গুদামের কর্মকর্তারা উৎকোচ নিতে এমন অভিযোগ এনে তাঁদের চাল ফেরত পাঠাচ্ছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র বলছে, এবার কুষ্টিয়ায় বোরো মৌসুমে ৪০ টাকা কেজিদরে ৩৬ হাজার ৪০১ টন চাল কিনছে সরকার। জেলার ৪৭৯টি চালকল এ জন্য চুক্তি করেছে। এর মধ্যে অটোরাইস মিল রয়েছে ৫২টি। হাসকিং মিল রয়েছে ৪২৭টি। ১১ মে বোরো সংগ্রহের উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন। গতকাল ৩১ মে পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৭ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে।

কয়েকজন মিলারদের চাল ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসব চালে আর্দ্রতা বেশি। আর্দ্রতা বেশি চাল গুদামে রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। ওজন কমে যায়।
হুমায়ন কবির, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জগতি খাদ্যগুদাম

সদর উপজেলার খাজানগর এলাকায় দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম। চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদসহ সংগঠনের নেতাদের বড় বড় অটোরাইস মিল রয়েছে। সরকারি গুদামে কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী চাল সরবরাহ করে থাকেন।

খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদরের জগতি ও বড় বাজার খাদ্যগুদামে সবচেয়ে বেশি চাল সংগ্রহ হয়। এ ছাড়া বাকি পাঁচ উপজেলার গুদামে চাল নেওয়া হয়।

অভিযোগ উঠেছে, চাল সংগ্রহ শুরু হওয়ার পর কয়েকজন মিলমালিক ও মালিক সমিতির নেতারা গুদামে নিম্নমানের চাল পাঠাচ্ছেন। এসব চাল সরকারি নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় তা কেনা থেকে বিরত থাকছেন গুদাম কর্মকর্তারা।

বৃষ্টি শুরু হলে হাটবাজারে ভেজা ধান আসে। এসব ধান কিনে তা থেকে চাল তৈরি করায় আর্দ্রতা কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
আবদুস সামাদ, সভাপতি, চালকল মালিক সমিতি কুষ্টিয়ার জেলা শাখা

বড় বাজার গুদামে গত ১৫ দিনে ২০টির মতো ট্রাক ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আবদুর রশিদেরই রয়েছে ১০ ট্রাক চাল। এসব চালের আর্দ্রতা ১৪ দশমিক ৫ থেকে ১৪ দশমিক ৮ পর্যন্ত। পাশাপাশি ভাঙা দানা ও লাল চালের পরিমাণ বেশি ছিল। আর্দ্রতা হওয়ার সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া স্বর্ণা অটোরাইস মিল, সালাম অটোরাইস মিল, ব্যাপারী অটোরাইস মিলের প্রায় ২০ ট্রাক নিম্নমানের চাল ফেরত দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার শ টন চাল ফেরত পাঠানো হয়েছে।

জগতি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, আবদুর রশিদসহ কয়েকজন মিলারদের কয়েক ট্রাক চাল ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসব চালে আর্দ্রতা বেশি। আর্দ্রতা বেশি চাল গুদামে রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। ওজন কমে যায়।

বড় বাজার এলাকায় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন অভিযোগ করেন, অনেক সময় নিম্নমানের চাল ট্রাক থেকে না নামিয়ে ফেরত দেওয়া হলে হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে কয়েকজন কর্মকর্তা কথা না শোনায় তাঁদের বদলি করে দেওয়া হয়েছে অন্য জেলায়।

চালকল মালিক সমিতি কুষ্টিয়ার জেলা শাখার সভাপতি ও স্বর্ণা অটোরাইস মিলের মালিক আবদুস সামাদ বলেন, বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার পর বৃষ্টি শুরু হলে হাটবাজারে ভেজা ধান আসে। এসব ধান কিনে তা থেকে চাল তৈরি করায় আর্দ্রতা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। তবে চালের মান অনেক ভালো। দুই-এক ট্রাক সমস্যা হতে পারে। সবচেয়ে ভালো চাল সরকারকে দেন তাঁরা।

এদিকে গত সোমবার খাদ্য মন্ত্রণালয় খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলা প্রশাসক, খাদ্যনিয়ন্ত্রক ও কয়েকজন মিলমালিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে চালকলের মালিক আবদুর রশিদ অভিযোগ করেন, খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা অহেতুক মিলারদের হয়রানি করছেন। তাঁদের চালের গুদাম থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। উৎকোচ নেওয়ার জন্য এই কাজ করা হচ্ছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, ২০ দিনে প্রায় ৩০ ট্রাক চাল ফেরত পাঠানো হয়েছে। গুদাম কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেসব ট্রাকে নিম্নমানের চাল আসবে, সেগুলোর নম্বরসহ মিলারদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে।