নির্ধারিত সময়ে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বেগ

সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’। সংগঠনটির সদস্যরা বলেছেন, এবার বাঁধের কাজে শুরু থেকেই অবহেলা ও গাফিলতি ছিল। রয়েছে সঠিক তদারকির অভাব। যে কারণে এখনো কাজ শেষ করা যায়নি। এ অবস্থায় হাওরের ফসল নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। বাঁধ নির্মাণে গাফিলতির কারণে ফসলের কোনো ক্ষতি হলে তার দায় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) নিতে হবে।

আজ শনিবার দুপুরে সংগঠনের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়। হাওরে বাঁধ নির্মাণের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরতে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় পাউবোর সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন সংগঠনটির সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাঁধের কাজ ৮২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে—পাউবোর এই দাবি ‘মনগড়া’ ও ‘ভিত্তিহীন’। সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গড়ে কাজ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ। হাওরে বাঁধ নির্মাণের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

পিআইসিতে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক দলের লোকজন নামে-বেনামে ঢুকে পড়ায় কাজে গাফিলতি হচ্ছে। কাজে সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও পিআইসিকে প্রয়োজনীয় টাকা না দিয়েই কাজের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
বিজন সেন রায়, সাধারণ সম্পাদক, হাওর বাঁচাও আন্দোলন

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। তিনি বলেন, কাজের নীতিমালা অনুযায়ী নভেম্বর মাসের মধ্যেই প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, এই কাজ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেও করা হয়েছে। এ কারণে কোথাও কোথাও কাজ শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে। আবার অনেক হাওরে প্রশাসন ও পাউবোর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নেওয়া হয়েছে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প। পিআইসিতে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক দলের লোকজন নামে-বেনামে ঢুকে পড়ায় কাজে গাফিলতি হচ্ছে। কাজে সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও পিআইসিকে প্রয়োজনীয় টাকা না দিয়েই কাজের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। দুটি পিআইসির দুজন সভাপতিকে জেলও দেওয়া হয়েছে।

বিজন সেন অভিযোগ করেন, পাউবো কর্মকর্তারা পিআইসি পদ্ধতিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারার কারণ চিহ্নিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যাদের গাফিলতি রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু পিআইসির লোকজনের ঘাড়ে সব দোষ চাপালে চলবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকার বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু একটি মহল নানাভাবে এসব অর্থ লুটপাটে ব্যস্ত থাকে। এবারও সেটি হচ্ছে। যত্রতত্র বাঁধ দেওয়ার কারণে হাওরে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। হাওরের ছোট ছোট নালা ও নদীতে মাটি পড়ে সেগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে হাওর থেকে পানি নামছে ধীরে। যে কারণে কৃষকের ফসল আবাদের সময় পিছিয়ে যায়। এবারও সেটি হয়েছে। আবার এখন নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। হাওরের ফসল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই দ্রুত সব হাওরে তদারকি বাড়িয়ে বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সুখেন্দু সেন ও স্বপন কুমার দাস রায়, সংগঠনের সদস্য শহীদ নূর আহমদ। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা রমেন্দ্র কুমার দে ও বিকাশ রঞ্জন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য, সদস্য মানবেন্দ্র চৌধুরী, দুলাল মিয়া, চন্দন রায়, সবিতা চক্রবর্তী প্রমুখ।

কাজে কোনো অনিয়ম বা গাফিলতি নেই। তারপরও আমরা যেখানেই যে অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মো. সবিবুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় এবার ৮১১টি প্রকল্পে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৭০৫টি প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। ৭৫২টির মাটির কাজ শেষ। বাকি কাজ তিন থেকে চার দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে, তাতে স্বাভাবিক আগাম বন্যা এলে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, ‘কাজে কোনো অনিয়ম বা গাফিলতি নেই। তারপরও আমরা যেখানেই যে অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৮১১টি প্রকল্পে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। প্রতিটি প্রকল্পে কাজ করে একটি পিআইসি। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য, এবার জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।