১৫ জুন বরগুনার তালতলী উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তালতলী উপজেলা যুবলীগের উদ্যোগে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বর্ধিত সভা উপলক্ষে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাও করেছে তারা। সভায় বক্তব্য দিয়েছেন তিন ইউপির আওয়ামী লীগ (নৌকা প্রতীক) প্রার্থীরা।
নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেছেন, নির্বাচন চলাকালে নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরনের সভা–সমাবেশ বা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করা যাবে না। এগুলো করে তারা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে।
যুবলীগের নেতারা দাবি করেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের নির্দেশে জেলার সব উপজেলায় তাঁরা বর্ধিত সভা করবেন। এরই ধারাবাহিকতায় তালতলীতে তাঁরা বিশেষ বর্ধিত সভা করেছেন। সভায় নৌকার বিজয় নিশ্চিত করার জন্য নেতা-কর্মীদের আহ্বান করা হয়েছে। তবে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাওয়া হয়নি।
যুবলীগের সভায় আমি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছি।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মারুফ রায়হানের সভাপতিত্বে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সভা শুরু হয়। শহরের একটি সড়ক বন্ধ করে এ সভা করা হয়। সভার কারণে সড়কের দুই পাশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। সভায় নিশানবাড়িয়া ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী কামরুজ্জামান, পচাকোড়ালিয়া ইউপির নৌকার প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার এবং সোনাকাটা ইউপির নৌকার প্রার্থী সুলতান ফরাজী বক্তব্য দেন। এতে আরও বক্তব্য দেন জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল কবির, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন ফরাজী, আক্তারুজ্জামান রকিব, তালতলী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম পাটোয়ারী প্রমুখ।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে জানতে চাইলে পচাকোড়ালিয়া ইউপির নৌকার প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, ‘যুবলীগের সভায় আমি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছি।’
জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় কার্যালয়ে আমাদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নেতা-কর্মীদের সমাগম বেশি হওয়ার কারণে একটি সড়কের এক পাশে আমাদের সভা করা হয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইন মেনে সভা করা হয়েছে।’ সভায় নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বানের বিষয়ে তিনি বলেন, সাংগঠনিক আলোচনার সময় নেতা-কর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। এখানে জোর করে নৌকাকে বিজয়ী করতে বলা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, যুবলীগের এই সভা ভোট সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অনেক প্রার্থী এই সভায় বক্তব্যও দিয়েছেন। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে তিনি শঙ্কিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সাদিক তানবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়ক আটকে সভা করার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ধরনের সভা-সমাবেশ করতে হলে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়।’
তবে সভা করার জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানায় তালতলী থানার পুলিশ। এ বিষয়ে তালতলী থানার পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন তপু প্রথম আলোকে বলেন, তালতলী যুবলীগ সভা করার জন্য তাঁদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী এলাকায় সভা, সমাবেশ ও মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।