নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর পরাজয়ের জন্য সাংসদকে দুষলেন আ.লীগ প্রার্থী

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত পরাজিত প্রার্থী কিরণ মিয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

‘এমপি সাব (সাংসদ) বিএনপির বেডা আজহারুলরে নমিনেশন (দলীয় মনোনয়ন) দিছিল। আমি এইডা কাইট্টা এমপির বিরুদ্ধে গিয়া নমিনেশন আনছি। এমপি ইতা করছে প্রশাসন দিয়া। আমি এমপির লাইগ্যা পরাজিত হইছি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নিজের পরাজয়ের কারণ এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কিরন মিয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি পরাজয়ের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাংসদ বি এম ফরহাদ হোসেনকে দায়ী করেন। নির্বাচনের প্রায় দুই সপ্তাহ পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনার দাবি জানান। তবে কিরন মিয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি জেলা আওয়ামী লীগের।

কিরন মিয়া উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বরের নাসিরনগরের ১৩টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে গোয়ালনগর ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান আজহারুল হক নির্বাচিত হন। নির্বাচনে কিরন মিয়া মাত্র ২৯ ভোটে পরাজিত হন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কিরন মিয়া বলেন, আজহারুল হককে গোয়ালনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দেখিয়ে মনোনয়ন তালিকায় ১ নম্বরে রেখে গোয়ালনগর থেকে কেন্দ্রে পাঁচজনের সুপারিশ পাঠানো হয়। কিন্তু আজহারুল উপজেলা বিএনপির আগের আহ্বায়ক কমিটির ৬৮ নম্বর সদস্য এবং উপজেলা যুবদলের আগের কমিটির সদস্য ছিলেন। আহজারুল হকের নাম মনোনয়ন তালিকা থেকে বাতিলসহ মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গত ৬ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আর তাঁকে মনোনয়ন দেননি।

কিরন মিয়া বলেন, নির্বাচনের তিন–চার দিন আগে স্থানীয় সাংসদ ফরহাদ হোসেনের পরামর্শে তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। প্রতি কেন্দ্রের কমিটি তালিকা করে জমা দেন। নির্বাচনের আগের রাতে ইউনিয়নের একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তালিকাভুক্ত নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য খোঁজাখুঁজি শুরু করে এবং হুমকি প্রদান করে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের দিন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বেলা দেড়টা থেকে রাত রাত পৌনে নয়টা পর্যন্ত উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করেন। নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে কেন্দ্র থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। অধিকাংশ সময় ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নৌকা ব্যাজ পরিহিত ব্যক্তিদের মারধর করেন। এতে ওই কেন্দ্রের সাধারণ ভোটাররা ভোট প্রদান করতে সাহস পাননি।

কিরন মিয়া আরও বলেন, গোয়ালনগরের নির্বাচনী এলাকাটি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি পূর্বাঞ্চল ও অন্যটি পশ্চিমাঞ্চল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ভীতির জন্য রামপুরা কেন্দ্রে ৬২ শতাংশ ভোট পড়ে। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী না থাকায় ৮৮ থেকে ৯০ শতাংশ ভোট পড়ে। কিরন মিয়া বলেন, নির্বাচনে সংশ্লিষ্টরা রামপুরা কেন্দ্র ব্যতীত আটটি কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল পাওয়ার পর ওই কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করে। তাঁকে মাত্র ২৯ ভোটে পরাজিত দেখানো হয়। তিনি ওই দুই ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোট গণনা বা পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান।

নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কিরন মিয়া বলেন, অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে বিলম্ব হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আলম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, যুবলীগের কর্মী কাউসার মিয়া, মো. খোকন মিয়া, আরশ আলী, ছাত্রলীগের কর্মী এনায়েত হোসেন প্রমুখ।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাংসদ বি এম ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে সংসদ অধিবেশন থাকায় তিনি কল ধরেননি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, গোয়ালনগরে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংসদ কোনো মন্তব্য করেননি, কাউকে সমর্থনও দেননি। ইউপি নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। সাংসদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। প্রার্থী হিসেবে আজহারুল হককে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর অভিযোগটি সঠিক নয়।