নিষেধাজ্ঞা না মেনে নির্মাণকাজ

সওজ বলছে, এ জমির মালিকানার বিরুদ্ধে গণপূর্ত বিভিন্ন সময়ে আদালতে মামলা করে। দুটি মামলায় গণপূর্ত পরাজিত হয়েছে।

বিরোধপূর্ণ জমিতে চলাচলের রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ায় বিরোধপূর্ণ একটি জমিতে আদালতের স্থিতাবস্থা রয়েছে। এতে বলা আছে, ওই জমিতে থাকা কোনো গাছগাছালি কাটা যাবে না, নির্মাণ করা যাবে না নতুন কোনো স্থাপনা। কুষ্টিয়া যুগ্ম জজ আদালতের এমন নির্দেশনা মানছে না গণপূর্তের কুষ্টিয়া কার্যালয়। ওই জমিতে হাঁটার পথ নির্মাণ করছে তারা। এ নির্মাণকাজে আপত্তি জানিয়েছে ওই জমির দাবিদার কুষ্টিয়া সওজ (সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর)।

কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের সাদ্দাম বাজার মোড় এলাকায় কুষ্টিয়া সড়ক ভবন ও গণপূর্তের কার্যালয়। একসময় সরকারি এ দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল যোগাযোগ ও ভবন অধিদপ্তরের আওতায়, সংক্ষেপে যাকে সিঅ্যান্ডবি বলা হতো। ভাগাভাগি হওয়ার পর সরকারি এ জমি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রেকর্ড হওয়ার কথা থাকলেও গণপূর্তের দাবি, ভুলক্রমে তা সড়ক বিভাগের নামে চলে গেছে।

তবে ১৯৭৬ সাল থেকে প্রায় তিন একর আরএস খতিয়ানভুক্ত ওই জমির খাজনা বছরে প্রায় এক লাখ টাকা করে সরকারকে দিয়ে আসছে সওজ। কিন্তু ওই জমির সব ভবন গণপূর্তের নামে। এমনকি যে ভবনে সড়কের অফিস আছে, সেটিও গণপূর্তের ছিল একসময়। পরে সড়কের ব্যবহারের জন্য দোতলা ভবনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। সওজ বিভাগ বেশ কয়েক বছর আগে কোটি টাকা খরচ করে দোতলা ভবনটি ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে। ভবনটি এখন তিনতলায় রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া সওজের আরেকটি অফিস রয়েছে শহরের চৌড়হাস মোড়ে, সেখানে সওজের কয়েক একর খালি জমি ও জলাধার রয়েছে। সেখানেই তাদের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বাসভবন।

সড়ক বিভাগের দাবি অনুযায়ী, তারা ১৯৭৬ সাল থেকে আরএস খতিয়ানভুক্ত জমিটির প্রকৃত মালিক, তারাই খাজনা দিচ্ছে। আর গণপূর্তের নথি বলছে, তারা পৌর কর দিয়ে আসছে। কাগজে এ জমির মালিকানাও তাদের নামে। সিএস রেকর্ডে জমির মালিকানা ছিল সিঅ্যান্ডবির। পরে আরএস রেকর্ডে পুরো জমির মালিকানা চলে যায় সওজের নামে। তবে ভবন সবই গণপূর্তের। আর ক্যাম্পাসের যে বিশাল বাগান আছে, সেটিও গণপূর্তের লাগানো। বাগানের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছর। বাগানে সব মিলিয়ে তিন শতাধিক গাছ রয়েছে।

সড়ক বিভাগ বলছে, এ জমির মালিকানার বিরুদ্ধে গণপূর্ত বিভিন্ন সময়ে আদালতে মামলা করে। দুটি মামলায় গণপূর্ত পরাজিত হয়েছে। আবারও তারা মামলার আবেদন করে জমিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়েছে। এখন গণপূর্তই সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে সড়ক নির্মাণ করছে।

কাগজপত্র ঘেঁটে জানা যায়, জমির মালিকানা নিয়ে ২০০৮ সালে সদর আমলি আদালতে প্রথম মামলা করে গণর্পূত বিভাগ। ২০১২ সালের দিকে সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়। জমির মালিকানায় সওজই থাকে। এরপর ২০১৪ সালে আরেকটি মামলা করে গণপূর্ত। সেটিও চালাতে অপারগতা দেখিয়ে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরও একই দিন জেলা যুগ্ম জজ আদালতে আরেকটি মামলা করে গণপূর্ত। একই দিন ওই জমির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত।

এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে ইট–বালু ফেলেছে গণপূর্ত বিভাগ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্রমিকদের দিয়ে হাঁটার পথ তৈরি করা হচ্ছে। এ খবর সওজের কর্মকর্তাদের মধ্যে জানাজানি হলে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সরেজিমন গিয়ে দেখা যায়, গণপূর্ত কার্যালয়ের সামনে ইট ও বালু ফেলে রাখা হয়েছে। বাগানের ভেতরে মাটি কেটে ইট বিছানোর কাজ চলছে।

জানতে চাইলে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, জমিটা তাঁদের হলেও কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে অনেক আগে সওজের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। এ জমি বিরোধপূর্ণ থাকলেও উভয় পক্ষ সেখানে স্বাভাবিক কাজ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। গাছ কাটা, ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হলেও হাঁটার পথ নির্মাণ করা যাবে না, সেটা বলা হয়নি। তারপরও কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিধিমোতাবেক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সব রকম কাজ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু গণপূর্ত আইন ভঙ্গ করে সড়কের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের নামে নেওয়া আরএস খতিয়ানের এ জমির মালিকানা কেন বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না, সেটা বোধগম্য হচ্ছে না।