‘নেতা জানে’ নীতিতেই নতুন কমিটি পুরোনোদের দিয়ে

উভয় কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক পদে স্থান পাওয়া ব্যক্তিরা আগের কমিটির কেউ ছিলেন একই পদে, আবার কারও হয়েছে এক ধাপ উন্নতি।

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র
প্রতীকী ছবি

ছয় বছর পর গত শনিবার কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন হয়েছে। এই সম্মেলনে প্রায় সব ভোটার উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় মঞ্চ থেকে ঘটা করে ঘোষণা আসে নতুন নেতৃত্বের নাম। তবে এই নেতৃত্ব ভোটে নয়, ‘নেতা জানে’ নীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উভয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান পাওয়া ব্যক্তিরা আগের কমিটির কেউ ছিলেন একই পদে, আবার কারও হয়েছে এক ধাপ উন্নতি।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল মিল্লাতকে এক ধাপ এগিয়ে এনে এবার করা হয়েছে সভাপতি। তিনি সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক পদে ২০ বছরসহ উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পদে তাঁর নেতৃত্বের বয়স ৩৫ বছর। সাধারণ সম্পাদক পদটি পান যুগ্ম সদস্যসচিব এম এ হান্নান। তিনি আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন।

পৌর কমিটিতে কোনো রদবদল নেই। এই কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। কুলিয়ারচর পৌর বিএনপির প্রথম কমিটি হয় দুই যুগ আগে। প্রথম থেকেই তিন একই পদে বহাল। সম্পাদক হয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব শাহাদাৎ হোসেন শাহ আলমকে। তিনিও প্রতিষ্ঠার পর থেকে পদটি ধরে রেখেছেন।

নেতা বলতে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় পর্ষদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলমকে বোঝানো হয়েছে। তাঁর বাড়ি কুলিয়ারচর। তিনি কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে টানা তিনবার দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে হেরে যান। দেড় যুগ ধরে তিনি এই সংসদীয় আসনের দুই উপজেলা ভৈরব ও কুলিয়ারচরে বিএনপির রাজনীতি এককভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। শুধু তা-ই নয়, দল পরিচালনায় আর্থিক জোগানের বড় অংশের ব্যয় তাঁর পকেট থেকে যায়। তিনি নেতৃত্বে আসার পর কুলিয়ারচরে তাঁর একক সিদ্ধান্তে দল গঠিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘সম্মেলনটি ছিল দীর্ঘ অপেক্ষার। অপেক্ষা শেষ হয়েছে। নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তবে নেতৃত্ব এসেছে সেই পুরোনো প্রক্রিয়ায়, “নেতা জানে” নীতিতে। এতে আমরা পেয়েছি নতুন করে রং করা পুরোনো ঢোল।’

লক্ষ করা গেছে, পুরোনোদের দিয়ে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হলেও নেতা-কর্মীরা সম্মেলন শেষে উচ্ছ্বাস নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পদপ্রত্যাশীদেরও প্রকাশ্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নেই।

দলীয় সূত্র জানায়, শনিবার বিকেলে কুলিয়ারচর সরকারি পাইলট হাইস্কুল মাঠে সম্মেলন উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ। প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী।

সম্মেলন শুরুর আগে ভোটারদের সঙ্গে পৃথক সভা করেন শরীফুল। ওই সভায় সব ভোটার এক বাক্যে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় শরীফুলের একক সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন। তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর সবার আস্থা ও বিশ্বাস আছে বলে সমস্বরে জানান।

সন্ধ্যা ৭টায় শরীফুল মঞ্চে উঠেন এবং কমিটির নাম ঘোষণা করেন। নবগঠিত কমিটির সভাপতি নুরুল মিল্লাত বলেন, ‘শরীফুল আলম আমাদের আস্থার জায়গা। আমাকে রাখলেও ঠিক, না রাখলেও ঠিক। এই আস্থা কেবল আমার একার নয়, সবার। রাজনীতিতে কাজ আর বিশ্বাস দিয়ে এই আস্থা অর্জন করেছেন তিনি।’

পৌর কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, ‘এই পদ আমার জন্য নতুন নয়। তারপরও সরকার হটানোর আন্দোলন বেগবান করার জন্য নতুন নেতৃত্ব দলে গতি ফেরাবে।’

প্রত্যক্ষ ভোটে না করে একক দায়িত্ব নিয়ে কমিটি করার কারণ জানতে কথা হয় শরীফুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা অতীতেও আমাকে জোর করে এই দায়িত্ব চাপিয়ে দেন। এবারও দিয়েছেন। তাঁরা আমার ওপর আস্থা রাখেন। আমিও চাওয়ার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে তাঁদের বিশ্বাস ধরে রাখি।’