নেত্রকোনায় লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ধানও সংগ্রহ হয়নি যেসব কারণে

মাড়াই শেষে ধান স্তূপ করছেন এক কৃষক
ফাইল ছবি

নেত্রকোনায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া আমন ধান সংগ্রহ অভিযান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। তবে এই সাড়ে তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, অ্যাপে নিবন্ধন, লটারিসংক্রান্ত ঝামেলা ছাড়াও খাদ্যগুদামে ধান দিতে খরচসহ নানা ঝক্কি পোহাতে হয়। তাই তাঁরা খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।    

স্থানীয় কৃষক, কৃষি বিভাগ ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০টি উপজেলার ১৩টি খাদ্যগুদামে ৭ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া ২৪ হাজার ৫১৬ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করার কথা। প্রতি কেজি ধানের দাম ২৭ টাকা ও সেদ্ধ চালের দাম ৪০ টাকা ধরা হয়েছে।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১৫ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযানে মাত্র ১৫ দশমিক ৩৬০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। ওই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ধানও সংগ্রহ হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় ১ লাখ ২৫ হাজার ১৪৯ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদন হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে হলে প্রথমে অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের নাম নিবন্ধন করতে হয়। এই কাজ করতে অধিকাংশ কৃষকই পারদর্শী নয়। অ্যাপে নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রচার-প্রচারণারও অভাব আছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন।

অ্যাপে নিবন্ধনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে নিবন্ধিত কৃষকদের মধ্যে লটারি হয়। লটারিতে যাঁরা নির্বাচিত হন, মূলত তাঁরাই গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন। আবার খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে হলে সঠিক আদ্রতা, পরিবহনের খরচসহ গুণগত মান যাচাইয়ের জটিলতায় পড়তে হয় কৃষকদের। এ কারণে তাঁরা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন।

এ ছাড়া সরকারি মূল্য বাজারের মূল্যের প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় কৃষকেরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে আসেননি। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে আমন ধান প্রতি কেজি ২৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।

কলমাকান্দা উপজেলার ঘনিচা গ্রামের তারা মিয়া তালুকদার বলেন, ‘এইবার প্রায় ২২০ মণ আমন ধান করছি। কিন্তু আমি কোনো সময় গুদামে ধান দিছি না (দিইনি)। কয়েক বছর আগে বালা কইরা ধান শুকাইয়া অনেক টেহা খরচ কইরা কলমাকান্দা গুদামে দিতে গেছিলাম। সেহানে কর্মচারীরা কয় মিটার পাস হয় না, ধান ভিজা। পরে ধান ঘুরাইয়া বাড়িত আনতে হইছে। গোদামে ধান দেওনের চেয়ে বাজারে বেচন বালা।’

আটপাড়া উপজেলার পোখলগাঁও গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান বাবুল বলেন, নিবন্ধন, লটারির ঝামেলা ছাড়াও খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলে অনেক খরচ পড়ে। আবার এক টন ধান গুদামে ঢোকাতে গেলে গুদামের শ্রমিকদের ৫০০ টাকা দিতে হয়। তবে সরকার যদি ইউনিয়ন পর্যায়ে সরাসরি ধান ক্রয়ের কেন্দ্র স্থাপন করে, তাহলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।

জানতে চাইলে জেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সদস্যসচিব ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মুস্তফা বলেন, বাজারের দাম ও খাদ্যগুদামের ধানের দাম প্রায় সমান হয়ে গেছে। কিছু কিছু বাজারে খাদ্যগুদামের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। এ কারণে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।