নোয়াখালীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাবার কোলে থাকা শিশুর মৃত্যু, বাবা গুলিবিদ্ধ

বাবার কোলে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে তাসফিয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাবার কোলে থাকা ৪ বছর বয়সের শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। একই ঘটনায় বাবাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত শিশুটির নাম তাসফিয়া আক্তার ওরফে জান্নাত। আর তার বাবার নাম মাওলানা আবু জাহের (৪৬)।

আজ বুধবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার হাজীপুর গ্রামের মালেকার বাপের দোকান নামক স্থানে এ গুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে। তবে তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।

বিকেল চারটার দিকে দুর্গাপুর এলাকার রিমনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী মামুনের দোকানে এসে তাঁর সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে এবং ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হন। এ সময় শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে ওই স্থানে যান মামুনের মামা আবু জাহের।
মো. শাহ আজিম, চেয়ারম্যান, হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ, বেগমগঞ্জ

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ববিরোধের জের ধরে একই উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. রিমনের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয়জন বুধবার বিকেল চারটার দিকে হাজীপুর গ্রামের মালেকার বাপের দোকান নামক স্থানে মো. মামুনের মুদিদোকানে হানা দেন। মামুনের সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি করতে দেখে সন্তান কোলে নিয়ে এগিয়ে যান মামুনের মামা সদ্য বিদেশফেরত আবু জাহের। তিনি প্রতিবাদ করেন। এ সময় রিমন ও তাঁর সহযোগীরা প্রথমে মামুনকে, পরে আবু জাহেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন।

সূত্র জানায়, গুলির ঘটনায় মামুন অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও তাঁর মামা আবু জাহেরের শরীরে ও তাঁর কোলে থাকা ৪ বছর বয়সী শিশুকন্যা তাসফিয়া আক্তারের মাথা ও মুখমণ্ডলে লাগে। গুলির পর সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনার পর আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে গুলিবিদ্ধ আবু জাহের ও তাঁর শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরপর সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রাত আটটার দিকে কুমিল্লায় শিশু তাসফিয়া আক্তার মারা যায়। মৃত শিশুসন্তানসহ বাবাকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।

হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল চারটার দিকে দুর্গাপুর এলাকার রিমনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী মামুনের দোকানে এসে তাঁর সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে এবং ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হন। এ সময় শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে ওই স্থানে যান মামুনের মামা আবু জাহের। তিনি এর প্রতিবাদ করেন। এ সময় রিমন ও তাঁর সহযোগীরা প্রথমে মামুনকে, পরে তাঁর মামাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে মামুনের গায়ে গুলি না লাগলেও তাঁর মামা ও কোলে থাকা শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাজিব প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে পূর্ববিরোধের কারণে গুলির ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ৪ বছর বয়সী একটি শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা গেছে। আর শিশুটির বাবা আবু জাহের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করা হয়েছে।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে তিনি নিজেই অভিযানে রয়েছেন। পরিবারের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।