নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন নিয়োগ, আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন লঙ্ঘন করে বিজ্ঞান অনুষদের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম হোসেনকে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ মে রেজিস্ট্রার মো. আবুল হোসেন স্বাক্ষরিত দাপ্তরিক আদেশে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বিষয়টি পরে জানাজানি হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা। তাঁরা অবিলম্বে ওই নিয়োগ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ডিন নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।

অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম হোসেনকে দেওয়া রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের দাপ্তরিক আদেশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ফার্মেসির অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম হোসেনকে নিম্নোক্ত শর্তে ব্যাবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। ৬ মে থেকে ওই নিয়োগ কার্যকর হবে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন–২০০১–এর ২৩ নম্বর ধারার, ৫ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রতিটি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্দিষ্টকৃতভাবে অধ্যাপকের মধ্যে ইহার ডিন পদ আবর্তিত হইবে এবং তিনি দুই বৎসরের মেয়াদে তাহার পদে বহাল থাকিবেন।’ তবে শর্ত থাকে যে ‘কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকিলে সেই বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ডিন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হইবেন এবং কোনো বিভাগের একজন অধ্যাপক ডিনের দায়িত্ব পালন করিয়া থাকিলে ওই বিভাগের পরবর্তী পালাসমূহে বাকি অধ্যাপকেরা জ্যেষ্ঠার ভিত্তিতে ডিন পদে নিযুক্তির সুযোগ পাইবেন। আরও শর্ত থাকে যে একাধিক বিভাগে সমজ্যেষ্ঠ অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক থাকিলে, সে ক্ষেত্রে তাঁহাদের মধ্যে ডিন পদের আবর্তনক্রম ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্দিষ্ট হইবে।’

ব্যবসা প্রশাসন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম (মাসুদ) প্রথম আলোকে বলেন, অনুষদের ডিন একটি একাডেমিক পদ। এই পদে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংসদে প্রণীত আইন ও বিধিবিধান আছে। এটি এমন কোনো পদ নয়, যেখানে প্রশাসন তাদের ইচ্ছামতো নিয়োগ দিতে পারে। ব্যবসা প্রশাসন অনুষদে ডিন হওয়ার মতো উপযুক্ত শিক্ষক থাকার পরও বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপককে ডিন নিয়োগ করা সংসদে প্রণীত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অবিলম্বে এ নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান এই শিক্ষক।

ডিন নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে যে তিনজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ হলেন নজরুল ইসলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তাই বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপককে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনে স্পষ্ট বলা আছে, অধ্যাপক অনুষদের ডিন হবেন। যদি অধ্যাপক না থাকেন, সহযোগী অধ্যাপকদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ, তিনি হবেন ডিন। আর রেজিস্ট্রার স্যার যেটি বলেছেন, সেটি মন গড়া কথা। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানই করেছি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে। আমি বিদেশে কীভাবে গেছি, সেটি হলো আমার অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। এর সঙ্গে ডিন হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. দিদার-উল-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসা প্রশাসন অনুষদে অধ্যাপক না থাকায় বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপককে সেখানে ডিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসা প্রশাসন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক যাঁরা আছেন, তাঁরা এখনো ডিন পদে দায়িত্ব পালনে পরিপক্ব হয়ে ওঠেননি। আবার যিনি জ্যেষ্ঠ, তাঁকে নিয়েও জটিলতা রয়েছে, সেটি নিরসন হওয়ার আগপর্যন্ত তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না। তাই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।