নৌকা–জীবনের অবসান

শরীয়তপুর জেলার মানিচত্র

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার রাম রায়ের কান্দি গ্রামের বাসিন্দা গোলাপি বেগমের (৮৮) কোনো জমি নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই। ছেলেকে নিয়ে জয়ন্তিয়া নদীতে নৌকায় বসবাস করতেন তিনি। জেলা প্রশাসন তাঁকে ২ শতাংশ জমি ও একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে।

গোলাপি বেগমের মতো জেলায় ১ হাজার ২০০ গৃহহীন পরিবার জমি ও ঘর পেয়েছে। গতকাল রোববার সারা দেশের গৃহহীন পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহ ও জমি হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) ২২২ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের কাছে ঘর হস্তান্তর করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

শরীয়তপুরে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ২০০ পরিবার বাড়ি পাচ্ছে। এতে পাকা দুটি কক্ষ, একটি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর থাকছে। ২ শতাংশ জমিতে ওই ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ২ শতাংশ জমির মালিকানা দেওয়া হয়েছে ভূমিহীন ব্যক্তিদের।

সদর উপজেলায় ১০০ জন, নড়িয়ায় ২৮০, জাজিরায় ৩০০, ডামুড্যায় ৮০, ভেদরগঞ্জে ২৪০ ও গোসাইরহাটে ২০০ জনকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ২২২ জনের কাছে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

ডামুড্যা উপজেলায় গোলাপি বেগমকে রাম রায়ের কান্দি এলাকায় ২ শতাংশ জমি ও একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ইউএনও আলমগীর হোসাইন গতকাল দুপুরে গোলাপি বেগমের হাতে জমির কবুলিয়ত (দলিল) পৌঁছে দেন।

গোলাপি বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর ঢাকায় বস্তিতে থাকতেন। ছেলে নুরু মিয়া তাঁকে গ্রামে নিয়ে আসেন। কোথাও থাকার জায়গা না পেয়ে একটি নৌকা নিয়ে নদীতে বসবাস শুরু করেন। ১৫ বছর ঝড়বৃষ্টিতে নদীতে কষ্ট করে থেকেছেন। মৃত্যুর আগে ঘরে থাকতে পারবেন, এখন বড় সান্ত্বনা।

জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যায়ে ১ হাজার ২০০ ব্যক্তিকে ঘর ও জমি দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ৬৯৯ ব্যক্তিকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে সাংসদ, উপমন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্যোগে আরও ৪৪টি ঘর দেওয়া হয়েছে। এখন ঘর দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিহীন, গৃহহীন, বিধবা, অসহায়, বয়স্ক, দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। জেলার সব ভূমিহীন ব্যক্তিকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হবে।