নৌকার লজ্জাজনক হারে হাসির পাত্র হয়ে গেছি

মো. ইদ্রিস আলী

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচন হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নূরুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে ৩ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছেন। তিনি জামানত হারাচ্ছেন। ৫৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিতে সব মিলিয়ে নৌকায় ভোট পড়েছে মাত্র ৬৫টি। দলীয় প্রার্থীর এমন পরাজয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. ইদ্রিস আলীর (বীর প্রতীক) সঙ্গে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নৌকার প্রার্থীর এমন শোচনীয় পরাজয়কে কীভাবে দেখছেন?

মো. ইদ্রিস আলী: এটি আমাদের জন্য লজ্জার, কষ্টের। নৌকার ভরাডুবিতে আমরা এখন হাসির পাত্র হয়ে ঘরে বসে কাঁদছি। দোয়ারাবাজারে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। এই উপজেলায় আমি বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। ২০১৯ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহিম জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতেই উপনির্বাচন হয়েছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রার্থী মনোনয়নে কি ভুল ছিল?

মো. ইদ্রিস আলী: এটা একটা বড় কারণ। যিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তিনি রাজনীতিক নন, একজন ব্যবসায়ী, ঠিকাদার। উপজেলার সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকার কারণে আমার কাছে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ১১ জনের জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। সেখানে আমার নামটিও ছিল। পরে সে তালিকা জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে যায়। নূরুল ইসলামের নাম ছিল ৭ নম্বরে। স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা অভিজ্ঞ, জনপ্রিয়, তাঁদের নাম তালিকার প্রথম দিকে থাকে। কিন্তু যখন জানা গেল, একজন অনভিজ্ঞ, অরাজনৈতিক ব্যক্তি মনোনয়ন পেয়েছেন, তখন নেতা-কর্মীরা প্রবল ধাক্কা খান। একটা ক্ষোভ দেখা দেয়। শুরুতে নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু প্রার্থীর ব্যবসায়িক চিন্তাধারার কারণে আস্তে আস্তে সবাই দূরে সরে যান। একজন ঠিকাদারের কাজ হলো ১০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে লাভ করা। আর একজন রাজনীতিকের কাজ হলো নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে মানুষের চিন্তা করা, তাঁদের মঙ্গল করা। আমরা শেষ দিকে প্রার্থীকে পাইনি। তিনি নির্বাচনের পরিবেশটাই তৈরি করতে পারেননি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রার্থী পরিবর্তনের কোনো দাবি তুলেছিলেন?

মো. ইদ্রিস আলী: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের অভিজ্ঞা থেকে আমরা আর সেটি করিনি। কারণ, তখন এই উপজেলা থেকে এসব দাবি করা হয়েছিল। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও কেন্দ্রে সেগুলো তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তাই আমরা মনে করেছি, যাঁকেই নৌকা দেওয়া হয়েছে, তাঁকে নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করেছি। তবে সফল হইনি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মীদের কোন্দল-বিভক্তির প্রভাব ছিল?

মো. ইদ্রিস আলী: স্বাভাবিকভাবেই সেটা ছিল। তবে তার চেয়ে বেশি ছিল প্রার্থীর অনভিজ্ঞতা। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের কাছে টানতে, ধরে রাখতে পারেননি। কতক্ষণ এই বলয়ে, আবার কতক্ষণ ওই বলয়ে ঘুরেছেন। সবাইকে কাছে টানতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আর কাউকেই পাননি। আমরা অসহায় হয়ে গেলাম। কিন্তু আমি তাঁকে ছাড়তে পারিনি, সেটার প্রথম কারণ হলো প্রতীকটা নৌকা, দ্বিতীয়ত তিনি সরাসরি আমার ছাত্র ছিলেন। দেখা গেছে, আমরা এক জায়গায় সভা করতে গিয়ে বসে আছি, কিন্তু প্রার্থীর খবর নেই। আরেক পক্ষ তাঁকে নিয়ে গেছে মোকামে, ওয়াজে। শেষ পর্যন্ত প্রার্থী ছাড়াই সভা করে আসতে হয়েছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ভোটার উপস্থিতি কম নিয়ে কী বলবেন?

মো. ইদ্রিস আলী: দোয়ারাবাজারে সব সময় ভোটে উৎসব হয়। ওই যে বললাম, প্রার্থী নিয়ে নেতা-কর্মীরা শুরুতেই একটা ধাক্কা খেয়েছেন। মানুষ মনঃক্ষুণ্ন ছিলেন। মাঠে প্রচার-প্রচারণা কম ছিল। অনেক মানুষ নির্বাচনের খবর জানতেনই না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: উপনির্বাচনের প্রভাব কী ভবিষ্যতে দলে কিংবা নির্বাচনে পড়বে?

মো. ইদ্রিস আলী: অবশ্যই কমবেশি পড়বে। ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে এখানে দলে একটা ছত্রভঙ্গ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপনির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু এই ভোটে যা হয়েছে, তাতে সেটা কঠিন হয়ে গেল। একজন অভিজ্ঞ, জনপ্রিয় রাজনীতিক দলীয় মনোনয়ন পেলে তাঁকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব-দূরত্ব অনেকটা কাটিয়ে ওঠা যেত। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ হারালাম।