নৌকার হয়ে ভোট করতে গ্রামে গিয়েছিলেন গুলিতে নিহত শুক্কুর

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আজ সোমবার সকালে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ছবিতে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছেছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাটের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের শয্যায় কাপড়ে ঢাকা একটি গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে। লাশটি আনা হয়েছে সাতকানিয়ার বাজালিয়া ইউনিয়ন থেকে। হাসপাতালের নিবন্ধনে লাশের পরিচয়ে নাম লেখা ছিল আবদুস শুক্কুর (৪০)।

আরও পড়ুন

আবদুস শুক্কুরের বাড়ি চট্টগ্রাম শহরের শুলকবহর এলাকায়। তবে সাতকানিয়ায় তাঁর কোনো স্বজন না থাকায় লাশের সঙ্গে হাসপাতালে এসেছিলেন হৃদয় ও মো. মুন্না নামের দুই তরুণ। তাঁদের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায়। আজ সোমবার সাতকানিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য তাঁরা বহিরাগত হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে এসেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বেলা ১১টার দিকে বাজালিয়া ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবদুস শুক্কুর।

আরও পড়ুন

হৃদয় বলেন, ‘আমরা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে এসেছিলাম। বেলা ১১টার দিকে বাজালিয়া ইউনিয়নে ২ নম্বর বোর্ড অফিস কেন্দ্রে আমরা বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। তখন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন এসে হামলা চালান। এতে গুলিবিদ্ধ হন শুক্কুর। এ সময় আরও সাতজন আহত হন।’

সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আজ সোমবার সকালে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে
ছবি: সৌরভ দাশ

কেরানীহাট মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রাকিব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শুক্কুরের ঘাড়ে গুলি লেগেছে। এ ছাড়া শরীরে আরও ক্ষত আছে। বাজালিয়া থেকে যখন তাঁকে আনা হয়, তখন তিনি মৃত ছিলেন।

সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুবুল আলম লাশের সুরতহাল করেন। তিনি বলেন, শুক্কুর নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি সাতকানিয়ায় নয়। তবে কী কারণে শুক্কুর বাজালিয়ায় গিয়েছিলেন, তা বলতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

শুক্কুরের লাশের সঙ্গে হাসপাতালে আসা মুন্না বলেন, ‘আমরা গতকাল রাতে প্রায় ১০০ জন বাজালিয়ায় এসেছি। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে। শুক্কুরও আমাদের সঙ্গে আসেন। বিভিন্ন কেন্দ্র ভাগ করে দেওয়া হয় আমাদের। সবাই বাইরের লোক। ভোটে সহযোগিতার জন্য এসেছি। কিন্তু আমাদের কোনো জিনিসপত্র (অস্ত্র) ছিল না। ওই অবস্থায় আজ আমাদের ওপর আক্রমণ করা হয়।’

আরও পড়ুন

বাজালিয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান তাপস দত্ত ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শহীদুল্লাহ। প্রচারণা শুরুর পর থেকে দুই প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটছে। তাপস দত্ত বলেন, ‘শুক্কুর আমার কর্মী। তাকে প্রতিপক্ষরা মেরে ফেলেছে।’ তবে শুক্কুরের বাড়ি কোথায়, তা জানতে চাইলে এড়িয়ে যান তিনি।

সাতকানিয়ার ১৬টি ইউনিয়নে সোমবার সকাল থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। প্রতিটি ইউনিয়নের কেন্দ্রে ছিল বহিরাগতদের উপস্থিতি। সকাল থেকে খাগরিয়া, নলুয়া, ঢেমশা, বাজালিয়া, চরতীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নলুয়া ইউনিয়নে দুপুর ১২টার দিকে মো. তাসিব (১৩) নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।